চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লেখকের দৃষ্টিতে বইমেলা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

আজিজ কাজল, কবি ও প্রাবন্ধিক। চাকরি পাশাপাশি লেখালেখিতে সদা মশগুল এই কবি। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখিতে মগ্ন। এবারের বইমেলাকে সামনে রেখে খড়িমাটি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হলো কবির কবিতাগ্রন্থÑ ‘বাঁকা হরফে চাঁদ’। সম্প্রতি কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল কবির কাছে। তিনি প্রশ্নগুলোর যথার্থ উত্তর দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য প্রশ্নগুলোর উত্তর ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হল। বই প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে কবি বলেন, ‘সুন্দর বলেছেন। অনেকেই বই করে। এখন কথা হচ্ছে কারা করে? তাদের পাঠপ্রস্তুতি কী? এবং দীর্ঘজীবনের একটা সাধনা আছে কী না? বিষয়টা কিন্তু ভাবার অবকাশ আছে। এবং টু দ্যা পয়েন্ট করে বলছি।

আপনার প্রশ্নটার সদুত্তর খুবই জরুরি। মিডিয়ায় যে কখনো একটা গদ্য, পদ্য, ছড়া বা কবিতাও প্রকাশ করে নি। ভালো সম্পাদক দ্বারা সুসম্পাদিত হয়নি। সে কীভাবে দ্রুত বই বের করে? বিস্ময় বটে! কীভাবে নিজেকে লেখক দাবি করে?

সেটা একটা মহা প্রশ্ন! আমি, আমার সমসাময়িক অনেক লেখক দেখেছি। যারা বেশ লিখছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। এদের অবস্থা এখন তথৈবচ। কালের বিচারে এমন ভুঁইফোড় লেখকও বেশিদিন টিকবেনা। মূল ধারার কোন শিল্প বা সাহিত্য করতে হলে আপনার অনেক বিষয়ের প্রস্তুতি দরকার।

মোটাদাগে বললে লেখালেখির অন্যতম পূর্বশর্তই হচ্ছে পঠন-পাঠন। ভাবনায় বৈশ্বিক হওয়া। নিজেকে আপডেট রাখা।

বই প্রকাশের অনুভূতি নিয়ে বলেনÑ ‘প্রথম বই প্রকাশ করার আগে যতো না ছিলো পাঠ প্রস্তুতি ততই ছিলো আবেগ। যদিও আমার সৌভাগ্য, অনেক সিনিয়র বড় লেখক-বোদ্ধাদের সুপরামর্শ পেয়েছি। দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিকে ফলাও করে বইয়ের প্রচার প্রসার এবং নিউজ কাভারেজ হয়েছে। আর এখন বই প্রকাশের অনুভূতি বলতে যতো না আবেগ। তার সাথে আছে যুক্তি আর ভাবনা। এখন বই বের করতে গেলে হাজারবার চিন্তা করি। কেননা আমি জানি, এই বই একদিন কথা বলবে। আমার ধ্যান, চর্চা ভাবনার সমন্বয় করে, সুসম্পাদনা এবং নানা যুক্তি পরামর্শ গ্রহণ করেই কিন্তু তৃতীয় বইয়ে হাত দিয়েছি।
বই প্রকাশে জটিলতা নিয়ে জানানÑ ‘বই প্রকাশে সিরিয়াস কোন জটিলতা পোহাতে হয়নি।’
বই বিক্রি নিয়ে কবি বলেনÑ ‘এ ব্যাপারে আমি কখনো হতাশ ছিলাম না। এবং তাড়াও ছিল না। কেননা আমি আমার ব্যাপারে কনফিডেন্ট। আমি বেচাবিক্রির চেয়ে, কার হাতে যাচ্ছে। কারা পড়ছে। এই বিষয়টাই সবসময় চিন্তা করেছি। পঞ্চাশজন ভাল পাঠক আর আগ্রহীর কাছে গেলেই আমি মনে করি আমার শ্রম সার্থক হয়েছে। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে বিক্রি ভালোই হচ্ছে।

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলেনÑ ‘বই প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সবসময় এর গুণগত মানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কন্টেন্টের সাথে মিলিয়ে বইয়ের পরিচ্ছন্ন প্রচ্ছদ এবং কাঠামোর দিকেই বেশি নজর দিই আমি। এমনকি নামের ডিজাইন পর্যন্ত। যেমন, এবারের তৃতীয় বইয়ের প্রচ্ছদের সাথে মিলিয়ে, নামের ডিজাইন, নিজের হাতেই করেছি। লেখক পরিচিতিসহ নিজের একটা ছবি দিতেও বহুবার চিন্তা করি। কথা হচ্ছে গুণমান। এ ব্যাপারে আমি কখনো ছাড় দেইনি।’
নতুন লেখকদের উদ্দেশ্যে বলেনÑ ‘অবশ্যই বলার আছে। লেখালেখির মাঠ, এটা খুব একটা মসৃন নয়। পিচ্ছিল। যেকোনো সময় পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। সবসময় নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। বৈশ্বিক হতে হবে। বেশি বেশি পঠনপাঠন করতে হবে। নিজেকে স্টাডি করতে হবে। নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হবে।

এবারের প্রকাশিত বই নিয়ে বলেনÑ ‘এবারের প্রকাশিত বই হচ্ছে কবিতার বই। ‘বাঁকা হরফে চাঁদ’। এটি আমার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এখানে দেশ, মাটি, ইতিহাস, ঐতিহ্যসহ বিশ্বচেতনায়, সমকালীন বাংলা ভাষার সুর বা ইশারাকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ করেই শব্দ বাক্য উপস্থাপনায় নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। আছে হারিয়ে যাওয়া পুরনো বা দুর্লভ শব্দকে নতুন করে ভিন্ন ব্যঞ্জনায় উপস্থাপনের চেষ্টা।’
এবারের বইমেলা নিয়ে বলেনÑ ‘এটা অবশ্যই পজিটিভ। প্রতিবছর এরকম নতুন নতুন আইডিয়া বা সুপরিকল্পনায় চট্টগ্রামের বইমেলা এগিতে যাক এবং কোন ঝামেলা ছাড়া সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত বোঝাপড়ায়, একটা ভাল বইমেলাই সবসময় আশা করছি।’-বিজ্ঞপ্তি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট