চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

আবাসিকের পরিবেশ হলো না অনন্যায়

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৪১ পূর্বাহ্ণ

একটি আবাসিক এলাকা গড়ে উঠার জন্য যে পরিবেশ লাগে তার কোনটাই নেই সিডিএ’র অনন্যা আবাসন প্রকল্পে। তাই প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সেখানে কোন আবাসিক ভবন গড়ে উঠেনি। ১ হাজার ৭৩৩ প্লটের বিশাল এক আবাসিক প্রকল্পে সবেধন নীলমণির মত শুধুমাত্র এপোলো হাসপাতালের একটি ভবন নির্মিত হয়েছে। তবে এখনো চালু হয়নি সেই হাসপাতাল। আর পুরো আবাসিক এলাকাটি ঘাস আর জঙ্গলময়।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, অনন্যা আবাসিক এলাকার বুক চিরে অক্সিজেন মোড় থেকে যাওয়া মূল সড়কটির অবস্থা একেবারেই যাচ্ছে তাই। খানাখন্দক দীর্ঘদিনের। মেরামতের উদ্যোগ নেই। আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটিগুলোর দাঁড়িয়ে থাকার বয়সও প্রায় এক যুগ হবে। খুঁটিতে টানানো তারগুলো লুজ হয়ে গেছে। প্লটে প্লটে ঘাসের রাজত্ব। প্লটের সাথে লাগোয়া রাস্তাগুলো ঠিক নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। চারদিকে নিরাপত্তা দেয়াল নেই। প্লট ভরাটের জন্য মাটি ফেলতে চাইলেই স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বাধা দেয়। মাটি ভরাটের দায়িত্ব তাদেরকে না দিলে কাজ করতে দেয় না। আলোকায়নের কোন ব্যবস্থা না করায় রাতের আঁধার নামতেই সক্রিয় হয়ে উঠে অপরাধী ও মাদকসেবীরা। এখানে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে ইতোমধ্যে। নিরাপত্তার বিষয়টি সব সমস্যার উপরে উঠে এসেছে এই আবাসিকে। আবাসনের পরিবেশ গড়ে না উঠলেও এই আবাসিক প্রকল্পে বেশ কিছু প্লট দুইবার পর্যন্ত মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। আবাসন সংকট নিরসনে সিডিএ আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে, সেই লক্ষ্য পূরণ না হলেও মালিকরা প্লট বিক্রি করে ঠিকই লাভবান হচ্ছে।

একাধিক প্লট মালিকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে না ওঠায় তাদের ওখানে যেতে অনীহা। আবাসিকের রাস্তাগুলো কার্পেটিং করা হয়নি। কাছাকাছি কোনো বাজার নেই, বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। আবার বাড়ি নির্মাণের জন্য অনেকের মূলধন নেই, ব্যাংক থেকে বা ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করলেও তা পুনরুদ্ধারে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাছাড়া আশপাশের লোকেরা সেখানে কখনও গো-চারণ, আবার কখনও গরু-ছাগলের হাট বসায়। রাত হলে বসে মাদকসেবী এবং জুয়াড়িদের আড্ডা। কেউ এক ট্রাক মাটি ফেলতে গেলেও ইট-বালি সন্ত্রাসীদের কবলে পড়তে হয়।

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সেখানে কেউ তার প্লটে সীমানা দেয়াল দেয়ার জন্য ইট নিয়ে রাখলে তা ইট-বালি সন্ত্রাসীরা রাতের বেলা ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। নতুবা তাদের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে বাধ্য করে। সীমানা পিলার তুলে সেটি ভেঙে পিলারের ভিতরের লোহা নিয়ে যায় মাদকাসক্তরা। তাদের জ¦ালায় প্লট মালিকরা অতিষ্ঠ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনন্যা আবাসিক এলাকা নয়, নগরীর আবাসিক সংকট নিরসনে সিডিএ আশির দশকের পর থেকে ৫টি আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু মালিকরা সেখানে বাড়ি নির্মাণ করছেন না। এ পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া চার হাজার ৬৪৭ প্লটের মধ্যে মাত্র হাজার খানেক প্লটে বাড়ি নির্মিত হয়েছে। ফলে এখনও শূন্য পড়ে আছে অধিকাংশ প্লট। এতে আবাসন সংকট সমাধানের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। বরাদ্দপ্রাপ্তরা বলছেন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নাগরিক সুবিধা না থাকায় বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা পিছিয়ে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ পূর্বকোণকে বলেন, নগরীতে আবাসন সংকট নিরসন করার লক্ষ্যে আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে যোগ হওয়া মানুষের ভারে নগরীতে আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। শহর এমনিতেই সম্প্রসারণ হচ্ছে। সিডিএ’র উদ্যোগে আবাসন করা হলে সেটি পরিকল্পিত হয়। আর যদি মানুষ নিজের মত করে আবাসন গড়ে তুলে সেটি অপরিকল্পিত হয়। তাই অনন্যা দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। অনন্যায় বাড়ি নির্মাণ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আবাসিকের মাটি এখন নরম। তবে অন্তত ৩০টি প্লটে বাড়ি নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন নিয়েছেন প্লট মালিকরা। এই আবাসিকে পানি ও বিদ্যুত সংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্যাসের মূল লাইন টানা আছে। কিন্তু বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বারণ রয়েছে। ফলে গ্যাস নিয়ে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডিএ গত ছয় দশকে ১১টি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালে বাস্তবায়ন করা অনন্যা আবাসিক এলাকা প্লট বরাদ্দ করা হয় সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা কাঠা প্রতি। বর্তমানে সিডিএ কাঠা প্রতি মূল্য নির্ধারন করেছে ১৫ লাখ টাকা করে। কোন প্লট হস্তান্তর করতে গেলে কাঠা প্রতি ১৫ লাখ টাকার ১০ শতাংশ হারে হস্তান্তর ফি সিডিএ’কে পরিশোধ করতে হবে। অনন্যা আবাসিক প্রকল্পে তিন, চার ও পাঁচ এ তিন ক্যাটাগরির প্লটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল যথাক্রমে সাড়ে চার লাখ, পাঁচ লাখ এবং ছয় লাখ টাকা। এ ছাড়া কর্নার প্লটের জন্য বাড়তি ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তবে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে কাঠা প্রতি ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট