চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৃষ্টি¯œাত দিনে নেই বইপ্রেমীদের চাপ

অনুপম চৌধুরী

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে/জানি নে, জানি নে কিছুতে কেনো যে মন লাগে না’। বৃষ্টির দিনেই এমন গান মানায়। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টির এই গান একটু তেতো লাগে বৈকি। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই নগরীর আকাশ মেঘলা। দেখা যায়নি সূর্য। এরমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও ছিল। বেলা গড়িয়ে দুপুর হতেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। আর এই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই গতকাল বুধবার বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয়েছে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে অমর একুশে বইমেলা।

তিনটায় মেলার দরজা খোলা হলেও বইপ্রেমী তেমন ছিল না। প্রতিবছরই বইমেলার সময় বৃষ্টি হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মেলায় ঢুকতেই দেখা যায়, বইপ্রেমী দর্শনার্থী তেমন নেই। তার সাথে অনেক স্টল পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। দুপুর থেকে যেহেতু বৃষ্টি পড়ছে সেহেতু অনেক প্রকাশক তখনও পানি অপসারণের কাজ করে যাচ্ছিলেন। তৃতীয়

চোখ প্রকাশনার আলী প্রয়াস পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রতিবারই মেলা চলাকালে বৃষ্টি নামে। সে বিষয়টি মাথায় রয়েছে। যেহেতু সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে সেহেতু টেবিলে সাজানো বই পলিথিনের ভিতর সুরক্ষিত রেখেছেন। যাতে করে বইয়ের কোনো রকম ক্ষতি না হয়। আর সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, সেজন্য বৃষ্টির পানি থেকে বই বাঁচানোর প্রস্তুতি রয়েছে। বৃষ্টি হলে ক্ষতি হয় প্রকাশকের, কেননা বিক্রি হয় না। ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য মেলার সময় বৃদ্ধি করলে ভালো হয়।’
আগের দিন মঙ্গলবারও হালকা বাতাসের সাথে ধুলা উড়ছিল। সেই সূত্রে গতকালই বৃষ্টি শুরু হল। সকালে সূর্যের দেখাও যায়নি। এদিন সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সন্ধ্যা হতে হতেই বইমেলায় দর্শনার্থীর চাপ একটু বাড়ে। বৃষ্টির দিন হওয়ায় সবচেয়ে চিন্তিত দেখা যায় প্রকাশকদের। কারণ এই বিপর্যয় যদি বইয়ের উপর দিয়ে যায় তাহলে সমস্ত বই নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই প্রতিটা স্টলের ছাউনির সাথে ত্রিপল দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেজন্য স্টলের ভিতর পানি পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে অনেক স্টলের ত্রিপল পানি জমে ফুলে উঠে এসেছে ত্রিপল। আর মেলা পরিচালনার কর্মীরা মই দিয়ে পানি অপসারণের কাজ করে যাচ্ছেন। মেলার মাঠে ইট বিছানো হয়েছে যার ফলে কাদা নেই। সেই ফলশ্রুতিতে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা আরামছে ঘুরতে পারছেন। এত সমস্যার মাঝেও অনেকে বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে ছাতা নিয়ে ঘুরছেন স্টলের পর স্টল। আবার এর মাঝেও দেখা গেল অনেকে বইও কিনছেন। অনেকের হাতে ছিল বইয়ের ব্যাগ।

বাওয়া স্কুল থেকে আসা এক ঝাঁক শিক্ষার্থী ঘুরে ঘুরে দেখছেন স্টলের বইগুলো। তারমধ্যে তানহা পূর্বকোণকে জানানÑ ‘বৃষ্টি আমাদেরকে থামাতে পারেনি। আমরা দল বেঁধে স্কুল ছুটির পর ঘুরতে এসেছি। ভিড় তেমন নেই, তাই বৃষ্টি মাথায় বইমেলা উপভোগ করছি। দু-একটা বই কিনব। এরই মাঝে একটা পছন্দের বই কিনেছি। অনেক আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম আজ আসব। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বইমেলা ঘুরে যাচ্ছি।’
বিক্রি নেই, অনেক স্টলও খোলা হয়নি। এরমাঝে যে কয়েকটি স্টল খোলা হয়েছে তাতেই কিছু কিছু বইপ্রেমী দর্শনার্থী রয়েছে। বলাকা প্রকাশনের বিক্রেতা জানানÑ ‘বৃষ্টির জন্য বিক্রি নেই আর, ত্রিপলের ছিদ্র দিয়ে টুপ টুপ পানি পড়ছে। তাই বইয়ের উপর পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছি। এই বৃষ্টি আজ সব গ-গোল করে দিয়েছে। এখন আসলে বই বিক্রির সময়। বই দেখার দিন পার হয়ে গেছে। এমন সময় বৃষ্টি হলে বেচা বিক্রিতে বেশ প্রভাব পড়ে। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও অনেক বইপ্রেমীই বই কিনতে এসেছেন। এটাই আসলে বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা।’

বই মানুষের প্রিয় এক বস্তু। বই আবার অনেকের নিত্যদিনের সঙ্গীও। সেই টানে হলেও বইপ্রেমী দর্শনার্থী আসছেন সেটাকেই অনেকে বড় মনে করছেন। আর মেলাও প্রায় শেষের দিকে। আগামী শনিবার মানে ২৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। আবার ঠিক একটা বছর পর চট্টগ্রামে অভিন্ন বইমেলার আয়োজন করা হবে। মেলা আয়োজকদের এবারের বইমেলা আগের চেয়েও গোছানো ছিল। যার জন্য বৃষ্টি তেমনটা কাবু করতে পারেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বছরের প্রথম তিনমাসের (জানুয়ারি-মার্চ) আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে মার্চ মাসেই তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে আভাস দিয়েছে। তার সঙ্গে একই সময়ে হবে প্রবল বজ্রঝড়। চলতি ফেব্রুয়ারির বাকি ক’দিনে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। এ সময়ে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুইদিন বজ্রঝড় হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট