চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১০ মণ ঘি জোগাড় হলে রাধা নাচবে!

বিদ্যুতের খুঁটিতে হ য ব র ল

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প হ ১৯ দিন ধরে প্রকল্প কাজের অগ্রগতি নেই হ ঢাকা থেকে অনুমতি আসার পর বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ কাজ শুরু হবে হ বিদ্যুত বিভাগের দায়সারা ভাব, ভোগান্তি আরও দীর্ঘ হবে

ইমরান বিন ছবুর

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুতের খুঁটির কারণে সিডিএ এভিনিউ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। গত ১৯ দিন ধরে প্রকল্প কাজের কোন অগ্রগতি নেই। বিদ্যুত বিভাগের দায়সারা ভাবের দরুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। সহসা এই বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ঢাকা থেকে অনুমতি আসার পর খুঁটি অপসারণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। সেই অনুমতি কখন আসবে সেটাই এখন প্রশ্ন। অর্থাৎ ‘১০ মণ ঘি জোগাড় হলে পড়ে রাধা নাচবে। নাহলে নয়।’ সিডিএ এভিনিউ এলাকার সড়কের উভয় পাশে ড্রেনের উপর বিদ্যুৎ খুঁটি রয়েছে ২৪টি। তন্মধ্যে কয়েকটি ৩৩ হাজার ভোল্টের। কাজ থমকে যাওয়ায় ফুটপাতের অভাবে পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে সড়ক দিয়ে। ড্রেনও পুনরায় আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে। এছাড়া ড্রেনের কর্তনকৃত মাটির ধুলা বালিতে জনগণের পথচলা দায় হয়ে পড়েছে।

বৈদ্যুতিক খুঁটি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ড্রেন সম্প্রসারণে। সিডিএ এভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকায় এ খুঁটির কারণে আটকে আছে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ে আছেন এলাকাবাসী। সময়মত ড্রেনের কাজ শেষ না হলে গত বছরের মত এবারও বর্ষায় জলে ভাসতে হবে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, বারবার পিডিবিকে চিঠি দিলেও তারা নির্দিষ্ট সময়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাচ্ছে না। তবে নানা জটিলতার কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো দ্রুত সরানো যাচ্ছে না বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।

গতকাল শনিবার সিডিএ এভিনিউ এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিএন্ডবি কলোনি থেকে ২ নং গেট পর্যন্ত ড্রেনের উপর ২৪টি খুঁটি রয়েছে। যেগুলোর কারণে ড্রেনের কাজ আটকে আছে। অন্য এলাকায় ড্রেনের কাজ দ্রুত চললেও, এই এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির জন্য কাজ আটক আছে বলে জানান জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্টরা। কাজ দ্রুত শেষ করতে না পারলে এবারও বর্ষায় সাধারণ মানুষ জলাবদ্ধতার কষ্ট পাবে বলে জানান তারা।
সিডিএ এভিনিউ এলাকার কয়েকজন দোকানদারের সাথে কথা হলে জানান, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে এই এলাকায় ব্যবসা করতে পারছি না। এর আগেও একবার সিডিএ ড্রেনের কাজ করে টাইলস লাগিয়েছিল। সেই কাজ শেষ হওয়ার পর আবার জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ চলছে। একই জায়গায় বারবার কাজ করায় আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। বর্তমানে ড্রেনের কাজ দ্রুত গতিতে চললেও কিছুদিন ধরে কাজ বন্ধ আছে। শুনেছি বৈদ্যুতিক খুঁটির জন্য নাকি কাজ করতে পারছে না। কয়েক মাস পরেই বর্ষা শুরু হবে, দ্রুত কাজ শেষ না হলে গত বছরের ন্যায় এবছরও জলে ভাসতে হবে।’
বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেট এর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটির জন্য অনেক স্থানে ড্রেনের কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য পিডিবি কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি। তারা আমাদের কাছ থেকে সময় চেয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কতদিন লাগবে তা জানাতে পারেনি পিডিবি। সময় মত খুঁটি সরানো না গেলে তো দ্রুত কাজ শেষ করা যাবে না।
সব সংস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে গ্যাস, ওয়াসা, বিটিসিএল ও পিডিবির প্রচুর সংযোগ ছিল। সব সংস্থার সাহায্যে আমরা ক্যাবলগুলো সরিয়ে নিচ্ছি। তবে শুধুমাত্র বিদ্যুতের ক্যাবলগুলো সরাতে সময় লাগছে। বাকিগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে বিদ্যুৎ খুঁটি সরানোর জন্য জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পিডি আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে তা সরিয়ে নিচ্ছি। যেগুলো ৩৩ কেবি লাইন সেগুলো সরাতে একটু সময় লাগছে। এ লাইনগুলো সরাতে আমাদের ঢাকা থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়। এছাড়া বাকিগুলো আমরা দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছি।

সময় বেশি লাগার প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, চাইলেই কিন্তু বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানো সম্ভব না। এগুলো সরিয়ে তো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা যাবে না। আগে লাইন শিফটিং এর ব্যবস্থা করার পরই খুঁটি সরাতে হচ্ছে। এসবের জন্য কিছুটা সময় লাগছে। কিছু খুঁটি থেকে উভয়পাশে সংযোগ গিয়েছে, এগুলো সরাতে আমাদের একটু বেশি সমস্যা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঠিকাদার জসিম উদ্দিন জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটির জন্য অনেক ঝুঁকি নিয়ে ড্রেনের কাজ হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব শুধু ড্রেনের কাজ করা। বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর দায়িত্ব সেনাবাহিনী এবং বিদ্যুৎ বিভাগের। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে খুুঁটি সরানোর জন্য বলা হয়েছে। তারা খুঁটি সরালে আমরা কাজ শুরু করবো। বর্তমানে যে অংশে খুঁটি রয়েছে সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে। বাকি জায়গায় কাজ চলছে। আমরা চাই দ্রুত কাজ শেষ করে জনগণকে ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট