চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত

আ. লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন হ নুর আক্তার প্রমার স্থলে জাহেদা বেগম পপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। অনেক ওয়ার্ডে তৃণমূলের নেতাদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। বিক্ষুব্ধরা ঢাকায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে গতকাল একজন সফলও হয়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২, ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। এখানে মহিলা লীগের সদস্য নুর আক্তার প্রমার স্থলে প্রয়াত জননেতা ইসহাক মিয়ার কন্যা জাহেদা বেগম পপিকে দেয়া হয়েছে।

এদিকে, ৭ ও ৮ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাদের চরম অসন্তোষ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে যাকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন কয়েকমাস হয়েছে মাত্র। এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক নেতা তাকে কখনোই দেখেননি। ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী রাশেদ আলী জাহাঙ্গীর পূর্বকোণকে বলেন, যাকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাকে তিনি কোনদিন দেখেননি বা নামও শোনেননি। তিনি বলেন, উনি কিভাবে মনোনয়নের জন্য মনোনীত হয়েছেন জানি না। এমনকি মনোনয়ন লাভের পর এখনো ওই প্রার্থী তার সাথে কোন ধরনের পরামর্শ করার জন্যও আসেননি। তিনি বলেন, এবিষয়ে তৃণমূলের নেতা হিসেবে তার কাছ থেকে কোন মতামতও নেয়া হয়নি। যেহেতু দলের প্রার্থী দলীয় নির্দেশনা মেনে ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন উল্লেখ করে বলেন, তবে তার ভয় ‘ভোটাররা তাকে গ্রহণ করবেন কিনা?’ অথচ বর্তমান কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসির জনপ্রিয়তা আছে। জেসি ছাড়াও আরো কয়েকজন মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু কিভাবে যে, কি হল জানিনা।

৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে যাকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার সাথে রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই। জোহরা বেগম রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন। কিন্তু যেহেতু আমাদের নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন, তাই এখন আমাদের দায়িত্ব হল তাকে বিজয়ী করে আনা।

শুলকবহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সরোয়ার্দী পূর্বকোণকে বলেন, যাকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি গত ছয় মাস ধরে তাকে চেনেন। তবে চোখে পড়ার মত রাজনৈতিক কর্মকা- দেখা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চোখে ওই নেত্রীর গুণাবলী ধরা না পড়লেও হয়তো কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। সেই গুণাবলী বিবেচনা করেই হয়তো তাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। দলীয় নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই’।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত জোহরা বেগম পূর্বকোণকে বলেন, তিনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে কোন সময়ে ছিলেন তা এখন মনে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি যোগ্য বলেই তাকে ৪২ নং সাংগঠনিক মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভায় হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে তিনি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে নারীদের বিশাল মিছিল নিয়ে গিয়েছিলেন। এছাড়া প্রত্যেক মিছিল-মিটিংয়ে চার থেকে ৫শ’ মহিলা নিয়ে যাই। তারা আমার সাথে যাওয়ার প্রধান কারণ হল ভালবাসা। সারাবছর তাদের সাথেই আমি থাকি বলে তারা আমার ডাকে সাড়া দেন। গত গত ২৭ এপ্রিলে তার কমিটি ঘোষণা হয়’। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি এত বড় মিছিল নিয়ে দলীয় সভায় যোগদান করেছিলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা কখনোই তার পরিচয় জানতে চাননি। আমার নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। এখন নিজের টাকা খরচ করে মানুষের উপকার করি। পদ পেলে আরো বেশি উপকার করতে পারবো। নেত্রী সব জানে। নেতারা যদি আমার খোঁজ না নেন, তাহলে আমার কিবা করার আছে’। ডোর টু ডোর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করবো এই নীতি নিয়েই রাজনীতি করছেন উল্লেখ করে বলেন, জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
বর্তমান কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি পূর্বকোণকে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে তিনি ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে আবারো সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৭ সাল থেকে নগর মহিলা লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আছেন। তার বাবা স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন শব্দ সৈনিক। গত পাঁচ বছর তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পুরস্কার হিসেবে তিনি এবার মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করেছিলেন। এখনো আশা ছাড়েননি।

অপরদিকে, ৩৭ নং মুনির নগর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী পূর্বকোণকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তাদের বাড়িতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামন দুইবার এসেছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে এসেছিলেন। বন্দর থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এনামুল হক বলেন, তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছেন এই ওয়ার্ডে একজন বিশুদ্ধ আওয়ামী পরিবারের সন্তান দলীয় মনোনয়ন পাক। বর্তমানে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার পরিবার কখনোই আওয়ামী লীগ করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার পরিবারের একাধিক সদস্য বিএনএপি এবং জামায়াতের রাজনীতি করেন। বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতিকে জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয় করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। কাউন্সিলরদের নিয়ে যে ক্ষোভ এবং অভিযোগ তা সমাধান করারও দায়িত্ব পালন করবেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। লিখিত অভিযোগসমূহ নিয়ে তিনি আজ (সোমবার) বসতে পারেন বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট