চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শহুরে গ্রামটি সব্্জির জন্য প্রসিদ্ধ

আয়তন: ৫.৪৩ বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যা: ৩ লাখ ৫ হাজার ভোটার: ৩৮ হাজার ৯০০ জন

আল-আমিন সিকদার

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের একাংশ সাগরবেষ্টিত। সাগরের পাশেই বেড়িবাঁধ এবং তারসঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে বিল। যেখানে উৎপাদিত হয় বিষমুক্ত সবজি ও ধান। নগরবাসীর সবজির চাহিদা পূরণ করা হয় এই সবজি ভা-ার থেকে। শহরের মধ্যে গ্রামের স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে উত্তর হালিশহরে। ৫ দশমিক ২৪ বর্গ কিলোমিটারের এই ওয়ার্ডটি যেন শহরের মাঝেই এক টুকরো গ্রাম। গ্রাম সর্বস্ব ওয়ার্ডের কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের গ্যারেজ আবার কোথাও বহুতল ভবন। গ্রাম আর শহরের অন্যরকম স্বাদ নিতে অনেকেই এখানে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। কেউ থাকছেন ভাড়ায়। আর তাই গত কয়েক বছরে বিশাল আবাসিক গড়ে ওঠেছে উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে।

এই ওয়ার্ডে রয়েছে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মহিলা পলিটেকনিক, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান কলেজ, শারীরিক শিক্ষা কলেজ। আছে বিজিবি, চট্টগ্রামের দপ্তর, আর্টিলারি, সিএসডি গোডাউন ও এস ও এস শিশু পল্লী। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে রয়েছে তিনশ বছরের পুরনো একটি মসজিদ। জনশ্রুতি রয়েছে, মোগল আমলে এই এলাকায় বসবাসরত চৌধুরী পরিবারের কর্তা আসগর আলী চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদটি তৈরি করেছিলেন। শতবর্ষীয় এ মসজিদটি একনজর দেখতে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ভীড় জমান বিদেশি পর্যটকরাও। তবে এখানকার রাস্তাগুলো সরু ও ভাঙা হওয়ায় যাতায়াতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। পাশাপাশি বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যাতো রয়েছেই। খালেকুর জামান। পেশায় একজন শিক্ষক। পূর্বকোণকে জানিয়েছেন তার কাছে দৃশ্যমান সমস্যাগুলোর কথা। তিনি বলেন, ‘এখানে আসা-যাওয়ার জন্য নির্ধারিত কোনো গণপরিবহন নেই, যে অটোরিক্সাগুলো আছে ভাঙ্গা রাস্তার কারণে সেগুলোও একদিন চললে তিন দিন চলে না। এতে যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হয়। আর রাস্তার উপর অবৈধভাবে ইট-বালি রাখা হয়। আমরা প্রশাসনকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো সুরাহা হয় নি। আমরা চাই এই সমস্যাগুলোর সমাধানে ভবিষ্যত কাউন্সিলর যাতে কৃপা দৃষ্টি দেন।
মো. মজিদ। তিনিও এই ওয়ার্ডেরই একজন বাসিন্দা। এলাকার সমস্যার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই এলাকাতে প্রত্যেক বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া ড্রেনগুলো অপরিষ্কার থাকে। তার পাশাপাশি এক্সেস রোডের দিকেতো যাওয়াই যায় না। ৩-৪ বছর ধরে ঐ রোডের কাজ চলতে দেখছি কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। এইসব সমস্যার সমাধানে আমি ভবিষ্যত কাউন্সিলরের পদক্ষেপ চাই’।

স্থানীয়দের এসব দুর্ভোগ লাঘবে গত ৫ বছর কী করেছেন তা জানতে চেয়েছিলাম বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবুল হাশেমের কাছে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই ওয়ার্ডের উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য আমি ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এরমধ্যে ৩৫ কোটি টাকার কাজ শেষ, চলমান রয়েছে ২০ কোটি টাকার কাজ। এই চলমান কাজের মধ্যে কিছু কাজ বাকি থাকতে পারে, যা আমি ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে সমাপ্ত করার আশা রাখছি’। তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচা সড়ক পাকা করার ক্ষেত্রে আমার বেশির ভাগ টাকা ব্যয় হয়েছে, কারণ এই ওয়ার্ডে বেশিরভাগ সড়কই কাঁচা ছিল। এছাড়া নালা-নর্দমার সংস্কারেও আমি বেশ কিছু কাজ করেছি। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে মহেশখাল নিয়ে কাজ করেছি’।

পলিটেকনিক্যাল মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বখাটেদের লাঞ্ছনার শিকার হয়, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের সমস্যা আগে ছিল। তবে কর্তৃপক্ষের সাথে মিলে আমি এই বিষয়টি থানায় অবহিত করেছি। ফলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে এসেছে’।
এলাকার ভাঙ্গা রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে রাস্তাগুলো ভাঙ্গা দেখছেন সেগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। তবে ওয়াসার অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আমাদের বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমনকি নবনির্মিত রাস্তাও ওয়াসা বেশ কয়েকবার কেটেছে, যার কারণে এই রাস্তাগুলো আমাদের আবার সংস্কার করতে হচ্ছে’।
এলাকার মাদক নির্মূলে তার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘মাদক তো খুবই মারাতœক একটি ব্যাধি। এই মাদক নির্মূলে আমরা বর্তমানে সংগ্রাম করছি। কিছুদিন আগেও লালদিঘির ময়দানে আমরা একটি মাদকবিরোধী সভা করেছি। এছাড়া আমার ওয়ার্ডের জনগণকে আমি বিভিন্ন সময় মাদকের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করেছি। মাদক তো একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না, তবে এইসকল কাজের পর আমার ওয়ার্ডে মাদকের প্রভাব অনেকটা কমে এসেছে’।

নির্বাচনে জয় লাভ করলে তিনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার আশাব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও মহাব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজ পর্যন্ত বর্ধিত করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবুল হাশেমের বিপক্ষে নির্বাচনী মাঠে লড়বেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। জয়যুক্ত হলে এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান, শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে এবং মাদক নির্মূলে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া সড়কে আলোকবাতির ব্যবস্থা করা, বড়পোল থেকে রিং-রোডের সম্প্রসারণ ও সংস্কারে কাজ করতে চান তিনি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং হালিশহর সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট