চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সীতাকু-ে মহাসড়কেই যাত্রী উঠানামা করে অধিকাংশ গণপরিবহন

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু-

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জনপ্রতিনিধিদেরচলতে চলতে হঠাৎই মহাসড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে যাত্রী তোলে গণপরিবহন। লক্ষ্য একটিই, যেন অন্য কোন পরিবহন তাকে অতিক্রম করে সামনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের তুলে নিতে না পারে। সীতাকু- উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনগুলোর এ দৃশ্য নিত্যদিনের। আর এভাবে হঠাৎই মহাসড়কে লোকাল বাস-মিনিবাস দাঁড়িয়ে পড়ায় পেছন থেকে আসা দূরপাল্লার দ্রুতগামী গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকরা পড়ে যান বিপাকে। অনেক সময় তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাস অথবা পথচারীকে চাপা দেন। তখন ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটলেও এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেই হাইওয়ে পুলিশের।

সরেজমিনে উপজেলার বড়দারোগারহাট থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত এলাকায় ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে এ রুটে ট্রাফিক আইনের কিছুই মানছে না লোকাল বাস-মিনিবাসগুলো। এসব বাসের চালকরা দ্রুতগতিতে চলতে থাকলেও কোন যাত্রী দেখে হঠাৎ তারা দাঁড়িয়ে পড়ছে। এতে পেছন থেকে দ্রুত আসা দূরপাল্লার যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কখনো ঐ গাড়ির পেছনেই ধাক্কা দিচ্ছে অথবা গাড়িটিকে বাঁচাতে গিয়ে সড়কের পাশে এসে কোন পথচারীকে চাপা দিয়ে মারছে। এছাড়া উল্টোপথে যান চলাচলও আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এতে মহাসড়কের মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। এসব নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে হাইওয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জনপ্রতিনিধিরা। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে সীতাকু- পৌরসদর বাস ষ্ট্যান্ড, বাড়বকু-, কুমিরা ও ভাটিয়ারীর মত বড় বাজারগুলোতেই ট্রাফিক আইন ভাঙার ঘটনা বেশি। সীতাকু- সদর বাস স্ট্যান্ডে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ের ছড়াছড়ি। এখানে মহাসড়ক দখল করে সার্বক্ষণিক বেশ কিছু লোকাল যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রীর অপেক্ষায়। যা দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম। তিনি বলেন, এই বাজার থেকে বাসগুলোকে আরো দূরে সরিয়ে রাখা না হলে অতীতের মত আরো বহু প্রাণহানি হবে এখানে। এদিকে এর চেয়েও বেশি দুরাবস্থা উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ভাটিয়ারীর বাজারের। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এই বাজারের পশ্চিম অংশে অঘোষিত একটি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কার-মাইক্রো ব্যবসায়ীরা বাজারের ফুটপাত দখলে রেখে সেখানে প্রচুর মাইক্রো হাইএইস, কার প্রভৃতি দাঁড় করিয়ে ভাড়ার ব্যবসা করছেন। এতে স্থানীয়রা ফুটপাত হারিয়ে মহাসড়ক দিয়েও চলাচল করতে হয়। এসব কারণে এই বাজারটি উপজেলার সবচেয়ে বেশি যানজটপ্রবণ বাজারে পরিণত হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনাও এখানে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ হাইওয়ে পুলিশের উপর ক্ষুব্ধ। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলার সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভাটিয়ারীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন ছাবেরী।

এসময় ভাটিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ভাটিয়ারী বাজারটিতে মাঝে মাঝে এত যানজট হয় যে চলাফেলা করাই মুসকিল হয়ে যায়।

রাস্তার উভয় পাশে যেখানে সেখানে যানবাহন দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। সেখানে বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তারা দেখেও দেখেন না। একইভাবে মহাসড়কের পশ্চিম অংশে আইলেন করে দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাত করে দেওয়া হলেও সেই ফুটপাত দখল করে রাখেন মাইক্রো হাইএইস চালকরা। সবসময় পুলিশ থাকলেও এই অঘোষিত মাইক্রো স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করে জনসাধারণ এর চলাচলের পথ করে দিতে তাদের কোন ভূমিকা দেখা যায় না।

বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. আবদুল আওয়াল বলেন, ভাটিয়ারীতে বেশিরভাগ যানজট হয় বৃহস্পতিবার। এদিন মিলিটারি একাডেমির আর্মি সদস্যরা বাড়ি যাতায়াত করতে গিয়ে হেঁটে মহাসড়কে বারবার পারাপার হন। এসময় কিছুটা যানজট হয়। তিনি বলেন, এখানে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডটি আমি স্থাপন করিনি। বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা সকালে তাদের গাড়ি রাখেন আবার বিকালে চলে যাবার সময় নিয়ে যান। এটি উচ্ছেদ করতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা। তারা না করলে আমার কিছু করার নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট