চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হাসপাতাল ছাড়লেন আ জ ম নাছির

মেয়র নাছিরের কপাল পুড়ল যেসব কারণে

অনলাইন ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৯:৩৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মনোনয়ন নিয়ে শনিবার দিনভর ছিল টানটান উত্তেজনা। পরে রাতে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল কল্পনা-জল্পনার অবসান ঘুচিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন দল। আর তা নিয়েও চট্টগ্রামে আলোচনা চলেছে রবিবার দিনভর। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন কেন মনোনয়ন পেলেন না, তা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হয়েছে। তাদের বিশ্লেষণ কতোটা সঠিক ও বাস্তবসম্মত সেটির বিচারের ভার পাঠকের। আমরা কয়েকটি জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিশ্লেষণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল-

কালের কণ্ঠ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে রেজাউল করিম চৌধুরীকে বেছে নিয়ে বড় ধরনের চমক দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার দলের মনোনয়ন ফরম নেয়া দেড় ডজন প্রার্থীর মধ্যে ছিলেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও। ছিলেন সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এত হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে তেমন আলোচনায় ছিলেন না রেজাউল করিম চৌধুরী। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড আস্থা রাখল তার ওপরই। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের বাদ পড়াকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তার অনুসারীরা। তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, মেয়র পদে ফের নাছিরের ওপর আস্থা রাখবেন নেত্রী।

নাছিরের মনোনয়নবঞ্চিত হওয়া নিয়ে নগরজুড়ে চলছে চুলচেরা বিশ্নেষণ। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে বিভক্তি, অন্তঃকোন্দলের পেছনে মূলত নাছিরকেই দায়ী করা হয়। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ভোটে জয়ী হয়ে মেয়র হন নগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তার নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে সব সিটি মেয়রকে তাদের পদবি অনুযায়ী মর্যাদা দিলেও নাছিরকে সেই মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কারণ মেয়র নির্বাচিত হয়ার পর থেকে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ বাড়তে থাকে নাছিরের। যার প্রভাব পড়ে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিভক্ত হয়ে পড়ে নাছির ও মহিউদ্দিন বলয়ে। দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে।

দলীয় কোন্দলের জেরে গত পাঁচ বছরে নগরে নিজেদের মধ্যে খুন হয়েছেন অন্তত পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে আছেন- সিটি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা নাসিম আহমেদ সোহেল, চবি ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান, পাহাড়তলীর ছাত্রলীগ নেতা সোহেল ও আরেক ছাত্রলীগ নেতা মেহেদি হাসান বাদল।

নাছিরের ওপর এবার আস্থা না রাখার আরও কিছু কারণ আলোচিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও। গত বছর অক্টোবরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিনিধি সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মঞ্চে ডেকে নেন হাসিনা মহিউদ্দিনকে। কিন্তু মঞ্চের সিট প্ল্যানে হাসিনা মহিউদ্দিনের নাম না থাকায় আ জ ম নাছির তাকে নামিয়ে দেন। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীরা। ঘটনাটি জানাজানির পর থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। কোথাও ট্রাকবহর নিয়ে, কোথাও পদযাত্রার মাধ্যমে মিছিল করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন তারা। বিষয়টি কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ায়। এ নিয়ে মেয়র নাছিরের সঙ্গে তখন কথাও বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মেয়র নাছিরও এটি ভুল বোঝাবুঝি বলে পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

নগরের সব এমপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়াও কাল হয়েছে নাছিরের জন্য। নগরের এমপিদের সঙ্গে এক সময় খুব সখ্য ছিল তার। কিন্তু মেয়র হওয়ার পর দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে প্রথমে দূরত্ব তৈরি হয় নাছিরের। এরপর নগরের অন্য এমপিদের সঙ্গেও বিরোধে জড়ান তিনি। আবার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নাছিরের বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা সম্প্রসারণ ও গৃহায়নের এক প্রকৌশলীকে চড় মারার বিষয়টিও নাছিরকে বিতর্কিত করেছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদরা।

বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইলে তা এড়িয়ে গিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা ভালো মনে করেছেন, যাকে যোগ্য মনে করেছেন, তাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। রেজাউল করিম চৌধুরী তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ। আমাদের সবাইকে এক হয়ে বিজয়ী করতে হবে নৌকার এই প্রার্থীকে। প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা আমিও পেয়েছি। তৃণমূল থেকে আমাকেও তুলে এনে মেয়র করেছেন তিনি। দিয়েছেন নগরের সাধারণ সম্পাদকের পদও।

ইত্তেফাক

আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আ জ ম নাছির উদ্দীন আট কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারণগুলো হলো, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়া, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল জিইয়ে রাখা, অর্ধশতাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কোনোটিরই ঠিকঠাকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব ও স্নায়ুদ্বন্দ্ব, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি এবং দল থেকে সরকারকে আলাদা করা। এসব কারণে হেভিওয়েট প্রার্থী, ওয়ার্ডে প্রভাব, নিজস্ব বলয় সৃষ্টি, ওপরমহলের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকার পরও নৌকার মনোনয়ন পেলেন না বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সূত্র : ইত্তেফাক

গত কিছুদিন ধরেই কানাঘুষা চলছিল, নাছিরের হাতেই কি থাকবে নৌকার হাল, নাকি নতুন কেউ? এমতাবস্থায় শেষ পর্যন্ত নতুনেই ভরসা খুঁজল ক্ষমতাসীন দলটি। নাছিরের জায়গায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলো মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে। একই সঙ্গে পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে অগ্রাধিকার পেয়েছে জনপ্রিয়তা। একাধিক মাঠ জরিপের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়। জানা গেছে, শনিবার দলের সংসদীয় বোর্ড পাঁচ সংসদীয় আসন ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পাঁচ পর্বে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকারও নেন।

২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে প্রায় ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির এম মনজুর আলমকে হারান আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনিসহ এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২০ জন। তাদের মধ্য থেকে ১৬ জনকে শনিবারের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে ডাকা হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সবাই মিলে একক প্রার্থী নির্বাচন করলে আমাদের আর বসতেই হতো না।’ এ সময় বোর্ডে থাকা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা বিউটি অব ডেমোক্রেসি।’ তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা সাংগঠনিক দুর্বলতারও একটি লক্ষণ।’ চট্টগ্রামের প্রতি তার দুর্বলতার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে নতুন প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সময়ের আলো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নে চমক দেখালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১৯ জন। ডাকসাইটে প্রার্থী ছিলেন অনেকে। লবিং-তদবিরেরও কমতি ছিল না। এদের সবাইকে ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। সূত্র : সময়ের আলো।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা হিসেবে ঋদ্ধ করেছেন নিজেকে। এমন একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠককে চট্টগ্রামের মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিলেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার মধ্যরাতে নাম ঘোষণার পর থেকেই এটিই হয়ে ওঠে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। চট্টগ্রামেও সৃষ্টি হয়েছে দারুণ চাঞ্চল্য। একে পুঁজি এবং পেশিশক্তির দাপটের বিপরীতে ত্যাগী নেতার যথার্থ মূল্যায়ন বলেও রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে।

পাশাপাশি চায়ের টেবিলে-আড্ডায় আলোচনার অন্যতম বিষয়ও হয়েছে ‘কেন বাদ পড়লেন আ জ ম নাছির উদ্দীন?’
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাঈদ খোকন বাদ দিয়ে যখন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে প্রার্থী করা হয় তখনই মূলত ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে যান আ জ ম নাছির। আলোচনায় চলে আসেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কিন্তু তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে জড়াতে আগ্রহী না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ১৯-এ গিয়ে ঠেকে। আ জ ম নাছিরের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে। লবিং-তদবিরে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তেও শিকে ছিঁড়ল না তার ভাগ্যে।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে বিজয়ী আ জ ম নাছির দায়িত্ব গ্রহণ করেন জুলাই মাসে। ২০১৬ সালে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও আমলাদের সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে বেকায়দায় পড়ে যান। তিনি বলেছিলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন মেলে না বিনিময় ছাড়া। গাড়ি ও নানা লোভনীয় উপঢৌকন না পেলে আমলারা ফাইল ছাড়েন না। তার এই বক্তব্যে তুমুল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এরপর থেকে সরকারের সঙ্গে তার দূরত্বের শুরু।

প্রথম তিন বছর তিনি শুধু রুটিন ওয়ার্ক করে গেছেন। জলাবদ্বতা নিরসনসহ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণেও তার চেষ্টার ঘাটতি লক্ষণীয়। নগরীর অগুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ বছরের পর বছর অকেজো পড়ে থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠলেও তিনি তা দূর করতে পারেননি। শুধু সিডিএ এবং ওয়াসাকে দোষারোপ করে গেছেন। তার মনোনয়নপ্রাপ্তি এবং নির্বাচিত হওয়ার পেছনে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অবদান থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আ জ ম নাছির মন্তব্য করেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের মধ্যে পারিবারিকভাবে অর্থবিত্তের মালিক আর কেউ নেই। অন্যরা রাজনীতিতে এসে টাকার মালিক হয়েছে। এই বক্তব্যেও তিনি অনেকের বিরাগভাজন হন।

মহিউদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একটা মহীরুহ। তার সম্পর্কে এমন সব মন্তব্য নাছির করেছেন, যাতে তার অনুসারীরা আরও দূরে সরে যান। দলের বিভাগীয় সম্মেলনে বেগম হাসিনা মহিউদ্দীনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সেই দূরত্ব আরও বাড়ে। নাছির তার নিজস্ব বলয় থেকে বের হয়ে যেমন সবার মেয়র হয়ে উঠতে পারেননি, তেমনি উন্নয়ন কাজেও সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে ব্যর্থ হন। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী তার ওপর চরমভাবে অসন্তুষ্ট ছিলেন। যে কারণে ৬ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্বতা নিরসন প্রকল্প চসিককে না দিয়ে সিডিএকে দেওয়া হয়। গত সাড়ে তিন বছরে তিনি একবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি।

দেশের সব সিটি মেয়র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেলেও নাছিরকে তা দেওয়া হয়নি। তিনি মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও আরও অনেক ছোটখাটো সংগঠনের দায়িত্ব এবং চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশি সময় দিয়েছেন। গৃহায়ন অধিদফতরের এক প্রকৌশলীকে চড় মেরে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। নওফেল কোতোয়ালি আসনের সংসদ সদস্য। তার অনুসারী কাউন্সিলরদের সঙ্গেও তার দূরত্ব বাড়তে থাকে।

নগরীর চারটি আসনের সংসদ সদস্যদের কোনো মতামতের তোয়াক্কা তিনি করেননি। গত সাড়ে চার বছরে একবারও তাদের সঙ্গে বসার গরজ বোধ করেননি। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন। অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

সব মিলিয়ে এবার তার পাশে অনেকেই ছিলেন না, যারা গতবার তাকে মনোনয়ন পেতে সহায়তা করেছিলেন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী তার মাথার ওপর থেকে স্নেহের হাত তুলে নিয়েছিলেন সাড়ে তিন বছর আগে। দীর্ঘ সময়েও নাছির তা আর ফিরে পাননি। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে একই ব্যক্তি থাক, তাও চাননি প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে কপাল পুড়ল আ জ ম নাছিরের।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট