চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাতে উৎপাত মাদকসেবী ও বখাটের

ওয়ার্ড নং: ২০ আয়তন: ১ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা: ১ লাখ ৪০ হাজার ভোটার: ২৫ হাজার প্রায়

আল-আমিন সিকদার

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড দেওয়ান বাজার। নানা ঐতিহ্যে ঘেরা এই ওয়ার্ডটিতে রয়েছে শতবর্ষী বেশ কিছু স্থাপনা। যার মধ্যে ১শ বছরের পুরোনো কোরবাণীগঞ্জ জামে মসজিদ ও অভয়মিত্র মহাশ্মশান এবং ব্রিটিশ আমলের বলুয়ার দিঘি। তবে অবহেলা আর অযতেœ এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য।

শুধু কি তাই? হিন্দু অধ্যুষিত এই ওয়ার্ডের একমাত্র শ্মশান ‘অভয়মিত্র মহাশ্মশান’ পড়ে আছে ঢের অবহেলায়। বর্ষাকালে শ্মশানটি ডুবে থাকে হাঁটু পানির নিচে। পানির কারণে চিতা থেকে লাশ নামিয়ে ফেলতে হয়েছে বহুবার। অন্যদিকে, ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী বলুয়ার দিঘিটি পরিচর্যার অভাবে আর অবৈধ দখলের কারণে ক্রমেই হারাচ্ছে তার অস্তিত্ব, কমছে এর পরিধি।

এছাড়াও শিক্ষা অর্জনের জন্য এখানে ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি কলেজ থাকলেও ভবন স্বল্পতার কারণে এগুলোর কার্যক্রম চলে একটি ভবনের মধ্যেই। পাশাপাশি খেলার মাঠের অভাবে এলাকার যুবসমাজ ধাবিত হচ্ছে সন্ত্রাস, মাদকের দিকে এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকায় একটি খেলার মাঠের অভাবের কথা পূর্বকোণকে জানিয়েছেন মো. আলী নেয়াজ। তিনি বলেন, ‘এতো সরকার এলো গেলো কিন্তু আমাদের এলাকায় একটি খেলার মাঠ পাইনি। আর রাতের বেলা এলাকায় বখাটেদের আনাগোনাও খুব বেড়ে যায়। আমরা কিছু বললে তারা আমাদের ধমক দেয়। এলাকায় পুলিশ টহল বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান হত। তবে ভবিষ্যৎ কাউন্সিলর যেই আসুক তার কাছে আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান চাই।’
অভয়মিত্র মহাশ্মশানের সেবক স্বপন জলদাশ আমাদের জানিয়েছেন তার ক্ষোভের কথাগুলো। তিনি বলেন, ‘এই শ্মশানে মরদেহ ¯œান করানোর জন্য ভালো কোনো সুবিধা নেই। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমরা অবহেলায় আছি। বর্ষাকালে মরদেহ পোড়াতে আমাদের খুবই সমস্যা হয়। চিতার উপর পর্যন্ত পানি ওঠে যায়। জোয়ারের পানিতে প্রায় সময় এই শ্মশান ডুবে থাকে। আমরা ভবিষ্যৎ কাউন্সিলরের কাছে এর সমাধান চাই।’
জলাবদ্ধতা নিরসন করতে না পারার পাশাপাশি স্কুলের ভবন সমস্যার কথাও স্বীকার করেছেন বর্তমান কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে রাস্তাঘাটের কোন কাজ বাকি নাই। যেটা বাকি আছে সেটা হচ্ছে নালা-নর্দমার। জলাবদ্ধতা প্রকল্পে যে খালগুলো চলে গেছে সেগুলোর কোন কাজ করতে পারেনি। তবে যে রাস্তার কাজ শেষ করেছি সেগুলো এখন ‘টিএন্ডটি’ কাটছে। গত ৫ বছরে এই ওয়ার্ডে প্রায় ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি বড় কালভার্টের কাজ করেছি।’
শিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুইটি স্কুল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এগুলো নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ লাখ টাকা করে দুটির জন্য মোট ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আসছে। এখন এটার ডিজাইন পরিবর্তনের জন্য আবার পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা বলেছি, এই টাকা দিয়ে যতটুকু সম্ভব কাজ করতে। বাকি কাজ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে করবো।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি টানা ১৫ বছর এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর। আমার দল আওয়ামী লীগ থেকে আমি মনোনয়ন চেয়েছি। দল মনোনয়ন দিলেই নির্বাচন করবো। আর মনোনয়ন পেলে এটাই হবে আমার শেষ কাউন্সিলর নির্বাচন। এরপর আর কাউন্সিলর নির্বাচন করবো না।’
নির্বাচনে জয়লাভ করলে এবার কি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানের স্কুল ২টি ও কলেজ নিয়েই আমি কাজ করবো। আমার চেষ্টা থাকবে এখানকার কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা।’
বর্তমান কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর মত এই ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করতে চাচ্ছেন আরও চার প্রার্থী। তারা হলেন, সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ, মহানগর যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাপ্পি, ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রিমু ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক নাজমুল বরাত রনি।
অন্যদিকে, বিএনপির হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী ও কোতোয়ালী থানা বিএনপির সহ সভাপতি মো. হাফিজুল ইসলাম মজুমদার মিলন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা কে, কি বললেন?

ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ নির্বাচনে জয়লাভ করলে ভেঙে ফেলা স্কুল দুটি নির্মাণের পাশাপাশি এই ওয়ার্ডের একমাত্র কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা এবং কোরবানি বাজার এলাকার সরু সড়কগুলো সম্প্রসারণ করার আশা ব্যক্ত করেন।
দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী নির্বাচনে জয়লাভ করলে এলাকার সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি মাদক নির্মূলসহ দুটি বিষয়কে প্রধান্য দেয়ার কথা জানিয়েছেন। যেগুলো হলো- কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং ওয়ার্ডের জনগণের সমস্যা সমাধানে প্রত্যেক এলাকায় গিয়ে নিজ তদারকিতে কাজ করা।
বিএনপি থেকে আরো মনোনয়ন চাইছেন কোতোয়ালী থানা বিএনপির সহ সভাপতি মো. হাফিজুল ইসলাম মজুমদার মিলন। এর আগে তিনি ২০১৫ সালে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে ওয়ার্ডের বৃদ্ধদের বয়স্কভাতা নিশ্চিত ও এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করতে চান। এছাড়াও তিনি এলাকার অনুন্নত সড়কের সংস্কার ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে স্থায়ী বাজার নির্মাণ করতে চান।
মহানগর যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাপ্পি তার দল আওয়ামী লীগ থেকে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে চান। জয়লাভ করলে এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যে ৫টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো- স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আরবান ক্লিনিকের আধুনিকীকরণ, গণপূর্ত অধীনস্ত হাবিব ম্যানসনে স্কুল নির্মাণ, অভয়মিত্র মহাশ্মশানের উন্নয়ন, বলুয়ার দিঘিতে এলাকাবাসীর জন্য কবরস্থান নির্মাণ ও ওয়ার্ডে ছোট পরিসরে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট