চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৩ দিনব্যাপী মেলা ২০ ফেব্রুয়ারি শুরু

শিব চতুর্দশী মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ সীতাকু-ে

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু- মহাতীর্থের চন্দ্রনাধ ধামে আসন্ন শিব চতুর্দশী মেলাকে ঘিরে সর্বত্র উৎসবের আমেজ চলছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে নানামুখী কর্মকা-ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে তীর্থ ভূমিতে। আগামী ২০-২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী আয়োজিত মেলায় প্রতিবারের ন্যায় এবারো দেশ-বিদেশের ১২-১৫ লক্ষ ভক্তের আগমন হবে বলে ধারণা করা

হচ্ছে। ফলে তাদের নিরাপত্তা, সুষ্ঠুভাবে ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনসহ নানান বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেলা কমিটি, তীর্থ কমিটি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৩শ বছর পূর্বে সীতাকু- চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থে শিব চতুর্দশী তিথিকে ঘিরে একটি সুবিশাল মেলা বসেছিলো। পৌরসদরের মন্দির সড়ক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার সুউচ্চ পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ দেবের মন্দির পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এ মেলায় সারাদেশের অগণিত ভক্তের আগমন হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কালক্রমে সারা পৃথিবীতে এ মেলার কথা ছড়িয়ে পড়ে, বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ সনাতনী ভক্তরা শিব চতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে এখানে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে দেবাধিদেব মহাদেবের কৃপা লাভের জন্য ছুটে আসেন। ফলে মেলার এ সময়ে এ তীর্থভূমি মহামানবের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। আর বিশাল এ মেলাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সংশ্লিষ্টদের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়। ফলে মেলার কয়েকমাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে মেলা কমিটি ও তীর্থ কমিটি। আর তাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে সার্বক্ষণিক পাশে থাকেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসক, সীতাকু-ের সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার এডিশনাল এসপি সার্কেল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পৌরমেয়র, স্থানীয় প্রেসক্লাব, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে তারা দফায় দফায় মিটিংয়ের মাধ্যমে মেলাকে সুষ্ঠু করতে পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছেন।

সীতাকু- শম্ভুনাথ মন্দিরের পূজারী দিপক চক্রবর্তী জানান, শিব চতুর্দশী তিথিতে মূলত দেবাধিদেব মহাদেবের সন্তুষ্টির জন্য ভক্তরা পূজা অর্চনা করেন। দেবাধিদেব মহাদেব স্বয়ং বলেছেন যে ‘কলিযুগে আমি চন্দ্রনাথেই অবস্থান করিব’। অর্থাৎ সীতাকু- চন্দ্রনাথ ধামে তিনি অবস্থান করবেন। এছাড়া চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ ৫১টি তীর্থের মধ্যে একটি। এখানে দেবী সতীর দক্ষিণ হস্ত এসে পড়েছিলো। ত্রেতাযুগে এখানে এসেছিলেন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র, সীতাদেবী ও লক্ষন। সীতাদেবীর নানান স্মৃতিকে ঘিরেই মূলত এই উপজেলাটি সীতাকু- নামে পরিচিতি লাভ করে। এছাড়া যুগে যুগে আরো অগণিত মহাপুরুষ এই তীর্থে এসে এটিকে মহাপূণ্যভূমিতে পরিণত করেছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ^াস পৃথিবীর সব তীর্থ ভ্রমণ করেও যদি কেউ সীতাকু- মহাতীর্থ দর্শন না করেন তার তীর্থ লাভের পূণ্য লাভ হয় না। তাই সকলে জীবনে একবার হলেও এই মহাতীর্থ দর্শনে ছুটে আসেন। আর মহাদেবের সন্তুুষ্টির সবচেয়ে উত্তম সময় শিবচতুর্দশী তিথি হওয়ায় এই তিথিতে এখানে সারা পৃথিবীর ভক্তরা ছুটে আসেন।

সীতাকু-ের প-িত রাজীব চক্রবর্তী জানান, এবার শিব চতুর্দশী তিথি ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট ২১ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শনিবার রাত্রি ৭টা ৭মিনিট ৫৩ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকবে। পরদিন রবিবার ব্যাসকু-ে অমাবস্যায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল ও পি-দান হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই মহাতীর্থে রয়েছে অসংখ্য মঠ-মন্দির। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বটতলী কালী মন্দির, শনি মন্দির, প্রেমতলা মন্দির, সত্য নারায়ণ মন্দির, শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবাশ্রম, ব্যাসকু-, ভৈরব মন্দির, সুর্যকু-, শংকর মঠ ও মিশন, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, জগন্নাথ মন্দির, মোহন্ত আস্তানা, ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ, শ্মশান কালী মন্দির, হনুমান মন্দির, উনকোটি শিবের বাড়ি, রামকু-, লক্ষন কু-, সীতাকু-, নারায়ণ ছত্র, সীতার পাতালপুরী, দধিকু-, জ্বালামুখী কালী বাড়ি, গুরুধ্বনী, অন্নপূর্ণা মন্দির, স্বয়ংভূনাথ মন্দির, বিরূপাক্ষ মন্দির ও পাহাড় চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির। এছাড়া মেলার দিনগুলোতে পুরো তীর্থভূমিজুড়ে বসে অগণিত দোকান-পাঠ। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ এ মেলায় অংশ নেন। সারাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ এ সময় ছুটে আসেন।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট উন্নয়ন কর্মী পলাশ চৌধুরী বলেন, এবার শিবচতুর্দশী মেলা চলবে ২০-২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ মেলায় ১২-১৫ লাখ দেশ-বিদেশের ভক্তের আগমন হবে। মেলাকে উৎসবমুখর করতে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
সীতাকু- থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, সীতাকু-ের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি একটি বিশাল মেলা। এজন্য চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের বিশেষ দিক নির্দেশনা মেনে আমাদের প্রায় ৫’শ পুলিশ সদস্য মেলায় দায়িত্ব পালন করবে। মেলায় আগতরা যেন নিরাপদে ফিরতে পারে সেজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখব।

মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি ও সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, শিব চতুর্দশী মেলা শত শত বছরের প্রাচীন একটি ঐতিহ্য। এখানে দেশ-বিদেশের ১০-১৫ লাখ ভক্তের আগমন হয়। ফলে এটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করাটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা সব কিছু মাথায় রেখে মেলাটি সুষ্ঠু করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট