চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

করোনার প্রভাব প্রসাধন সামগ্রীতেও

চীনের ছাড়াও বেড়েছে সব দেশের পণ্যের দাম

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে বাজারে বেড়েছে সব ধরনের প্রসাধন সামগ্রীর দাম। অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে চীন ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে আসা সকল প্রকার প্রসাধনীর দামও। প্রচলিত দেশি-বিদেশি নামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর প্রতি বিশেষ করে নারী ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ আছে। কিন্তু এ মুহূর্তে চীনের করোনাভাইরাসের সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নারীদের প্রসাধনী সামগ্রী জন্য পরিচিত নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও ভিআইপি টাওয়ারের পাইকারি বাজারেও বেড়েছে পণ্যের দাম। এছাড়া সানমার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনেস্কো, চকবাজার, আগ্রাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন নামিদামি শপিংমলে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে এসকল প্রসাধনী সামগ্রী। তবে ভিআইপি টাওয়ারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ক্রেতার চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত প্রসাধনী মজুদ আছে। কিন্তু কিছু আমদানিকারক কোন একটি কারণ পেলেই এমনি দাম বাড়িয়ে দেয়। গতকাল বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, চাইনিজ প্রোডাক্টের মধ্যে জনপ্রিয় হেয়ার স্পা চাওবা ও হ্যাংলি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ভিআইপি টাওয়ারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন প্রোডাক্ট দুইটির মধ্যে একটিও দাম বাড়েনি। চাওবা ব্র্যান্ডের চুলের স্পা মলগুলোতে ছোট কৌটা বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকায়। কিন্তু ১৫ দিন আগেও এটি বিক্রি হয়েছিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। বড় কৌটা

সাড়ে ৩শ থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকায়। পার্লারের প্রোডাক্টের মধ্যে মিল্ক রিবোন্ডিং প্রোডাক্টটি সাড়ে ৯শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১শ টাকায়। আবার মলের কসমেটিক্স দোকানিরা ১৩শ টাকায় বিক্রি করছে। এছাড়া দাম বেড়েছে বডি লোশন, বডি বার্থ, শেম্পু, তেল, সুগন্ধি সাবান, মুখের মেকাপ সামগ্রী, চুল কালারের সকল ব্র্যান্ড, ব্যাগ, ফেশিয়াল সামগ্রীর মধ্যে উল্লেখ্য ম্যাসাজ ক্রিম, ব্লিস ও বিভিন্ন প্রকার প্যাকের। বেড়েছে ভারতের গোপীনাথ, কিসবিউটি, সোমিজ, কেয়াশেডসহ বাংলাদেশি কোম্পানি আয়ুর ব্যান্ডের প্রসাধনীরও। মেয়েদের প্রসাধনীর মধ্যে গোল্ড ব্লিস নামে ভারতীয় একটি প্রসাধনী যার দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ১৫দিন আগেও বড় আকারের একটি ব্লিস বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়। কিন্তু এরই মধ্যে এটি ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের কৌটা বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকায়। আমতল পাইকারি দোকান কাজী স্টোরে দেখা যায় প্রসাধনী সামগ্রী ছাড়াও দাম বেড়েছে স্ট্রেটনার, হেয়ারড্রাই, ফেসিয়াল মিশিনসহ সকল ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দামও। এছাড়া আয়ুরের ম্যাসাজ ক্রিমগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যেগুলো ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। একই ক্রিম সেন্ট্রাল প্লাজা, মতিটাওয়ারে বিক্রি হচ্ছে ১শ টাকায়। লেকমি ব্র্র্যান্ডের কাজল ১২০ টাকা থেকে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকায়। আবার বিভিন্ন মলের দোকানিরা ২৫০ থেকে ৩শ টাকায়ও বিক্রি করছে।
ভিআইপি টাওয়ারের আল আরব দোকানের মালিক রফিক সিকদার বলেন, আমি চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মেয়েদের সকল প্রকার প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি করি। আর সেসব প্রসাধনী পাইকারি বিক্রি করি। চীন থেকে এমুহূর্তে কোনো প্রসাধনী আসছে না ঠিকই। কিন্তু এখনো কোনো প্রসাধনীর দাম বাড়েনি। ভারত পাকিস্তান কিংবা দুবাইয়ের প্রসাধনীর দামতো বাড়ার প্রশ্নই নেই। তবে কিছু ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মলের খুচরা দোকানিরা করোনাভাইরাসের অজুহাত দিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে। তাছাড়া বাংলাদেশ শুধু চায়না প্রসাধনীর উপর নির্ভরশীল নয়, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের প্রসাধনীতে অভ্যস্ত। ভারত, পাকিস্তান ও চায়নার প্রসাধনী যথেষ্ট মজুত আছে। তবে সমস্যা যদি আরো বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে যারা রমজান উপলক্ষে আমদানি করার কথা ভাবছে তারাই সমস্যায় পড়তে পারে।
সেন্ট্রাল প্লাজার ফাস্ট শো দোকানের সত্ত্বাধিকারী এস এম ওয়াজেদ বলেন, আমাদের আগের পণ্য থাকায় আমরা এখনো আগের দামে বিক্রি করছি। কিন্তু শোনা যাচ্ছে এমুহূর্তে রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি দামে সকল প্রকার প্রসাধনীর দাম বেড়েছে। যদি সেখান থেকে বেশি দামে আনতে হয় তবে আমাদেরও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে। এছাড়া এখনো আমাদের কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি।
এদিকে শপিংমলগুলোতে প্রতিটি প্রসাধনীর দোকানে কম বেশি নারী ক্রেতাকে দেখা যায়। বেশি দামে প্রসাধনী কেনায় হতাশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী আসমা। কাজী স্টোরে পার্লারের পণ্য কিনতে এসে রাহাত্তারপুল কলি বিউটি পার্লারের মালিক কুলছুম আকতার বলেন, অনেক বেশি দামে কিনছি পার্লারের পণ্য। কিন্তু আমরাতো আর সেভাবে দাম বাড়াতে পারবো না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট