চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অমর একুশে বইমেলা স্টলে স্টলে ছোটদের বঙ্গবন্ধু

অনুপম চৌধুরী

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

ফাগুন এসেছে। প্রকৃতিতেও লেগেছে দারুণ দোলা। প্রকৃতির সাথে সাথে মানুষের মনেও দোলা দেয় বসন্তের বাতাস। নয় শীত নয় গরম, এমন আমেজে কাটছে জীবন। এরই মাঝে চলছে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে অমর একুশে বইমেলা। মুজিব বর্ষে জাতির পিতাকে নিবেদিত এই মেলায় ভিড় বাড়ছে দিনকে দিন। একদিকে চলছে সৃজনশীল লেখক-প্রকাশকদের মিলনমেলা অপরদিকে চলছে বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের আনাগোনা। গতকাল রবিবার বিকেল পাঁচটায় মেলায় ঢুকতেই দেখি অন্যদিনের তুলনায় বইপ্রেমী দর্শনার্থীর ভিড় বেশি। প্রায় স্টলের সামনে দর্শনার্থী ছড়িয়ে ছিটিয়ে বই দেখছেন। প্রায় স্টলে রয়েছে শিশুদের উপযোগী বই। শিশুদের জন্য কমবেশি প্রায় প্রকাশনা এবারে বইমেলায় বই করেছে। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী একবারই আসে তাই সে উপলক্ষ্যকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে হোক বা জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অনেক প্রকাশক-লেখক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই করেছে।

ততমধ্যে শিশুদের উপযোগী শিশুতোষ বঙ্গবন্ধুও কম নয়। প্রায় স্টলে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন নামের বঙ্গবন্ধু।

হাঁটতে হাঁটতে দেখা গেলো চন্দ্রবিন্দুর স্টলে কিছুটা ভিড়, কিছু সাংবাদিক সহকর্মীও ভিড় করছে স্টলের সামনে। অনেক ফটো সাংবাদিক ছবিও তুলছেন। একটু সামনে যেতেই পেলাম প্রিয় সাংবাদিক-লেখক শুকলাল দাশকে। এবারের বইমেলা উপলক্ষে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে বেরুলো ‘মুজিব তুমি বজ্রকণ্ঠ অটল হিমালয়’। লেখক ছন্দে-ছন্দে মুজিবকে নিয়ে গেঁথেছেন দারুণ সব শব্দের ঝংকার। মুজিবকে নিয়ে এই ছড়ার বই তার নবম গ্রন্থ। বইমেলার সামগ্রিক বিষং নিয়ে শুকলাল দাশ জানানÑ ‘গতবারের চেয়েও এবারের বইমেলা আরও বড় পরিসরে হচ্ছে সেটা আমাদের চট্টগ্রামবাসীর জন্য গৌরবের। যেখানে ঢাকাসহ সব লেখদের বই একসাথেই পেয়ে যাই যা অনেকটা ভালো লাগে। চট্টগ্রামের প্রকাশনা অনেকদূর এগিয়েছে; অনেকাংশে তারা ঢাকার প্রকাশনার চেয়েও ভালো বই করছে। যা আমরা ঢাকার সাথে পাল্লা দিতে পারছি সেটা অনেক আনন্দের।’ তরুণ লেখকদের নিয়ে তিনি বলেনÑ ‘আমাদের সময় আমরা লেখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতাম যা বর্তমান প্রজন্ম করছে না। তারা এখন অনলাইন নামক গ-িতে আবদ্ধ থাকছে; যাতে করে তারা অনেকটা বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। সেজন্য এই মেলা অনেক উপকার দিবে।’ নিজের প্রকাশিত বই নিয়ে তিনি বলেনÑ ‘অনেকদিন ধরে জাতির পিতাকে নিয়ে বই করার ইচ্ছে ছিল। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীই আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তাই এই বই করা। বইটি ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও ভালো লাগবে বলে আশা করছি।’ মুজিবকে নিয়ে তিনি অবলীলায় লিখেছেনÑ ‘তোমার ডাকে যুদ্ধে নামা/ ঠিক এনেছি জয়/ তুমি আছো বুকের ভেতর/ আমার কিসের ভয়!’

ছড়াকার আসলাম সানীর ‘মুজিবর ইতহাসে ভাস্বর’ এই ছড়ার বইটিও বেরুলো চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে। প্রায় প্রতিটা স্টলেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই তন্মধ্যেÑ আ. ফ. ম. মোদোচ্ছর আলীর ‘গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের’ শিবু কান্তি দাশের ‘আমার বঙ্গবন্ধু আমার স্বাধীনতা’, সিরু বাঙালির ‘দুনিয়া কাঁপানো মহামানব’, চিন্ময় রায় চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু পিতা মুজিব’ বাসুদেব খাস্তগীরের ‘কবিতায় ইতিহাস কবিতায় মুজিব’, মিলন বনিকের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ রাসেলের গল্প’, ইশতিয়াক আলমের ‘শেখ মুজিবুর রহমান-কিশোর জীবনী’, আখতারুল ইসলামের জীবনীগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, শঙ্করী দাসের ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, রফিকুর রশীদের সম্পাদনায় ‘মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ কিশোর গল্প’ ইত্যাদি। পাশাপাশি শেখ রাসেল, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও বের হয়েছে অনেক বই।

মেলায় আগত বইপ্রেমী এবং পড়–য়া মানবিক কর্মী নিলুফা ইয়াসমিন বলেনÑ ‘এই মেলা প্রাণের, মেলায় প্রতিদিন আসি। পছন্দের কিছু বই কিনেছি। আরও কিছু বই কিনব। মেলায় সন্ধ্যার সময় আলোর সল্পতা রয়েছে, এটা দূর করা গেলে আরোও ভালো লাগবে। সামনে আরও বড় পরিসরে বইমেলা হোক এটাই প্রত্যাশা’।

বইমেলার বেচাকেনা নিয়ে কথা হয় বলাকা প্রকাশনের কর্মকর্তা জসীম ভাইয়ের সাথে, তিনি জানানÑ ‘বন্ধের দিন বেচাকেনা ভালো ছিল, কিন্তু এখন একটু কম আর বইপ্রেমী দর্শনার্থী বেড়েছে। সামনে বেচাকেনা আরও বাড়বে।’

গত বছর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে প্রথম সম্মিলিত বইমেলার আয়োজন করা হয়। যা দ্বিতীয় বৃহত্তর বইমেলা হিসেবে দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। এবারের বইমেলা আরও জমজমাট হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে লালখানবাজার এদিকে লাভলেইন থেকে নানা রঙের বইমেলার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে আশপাশের রাস্তা। সিসিটিভির আওতায় থাকবে পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট