চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

লালদীঘির জনসভায় সিপিবি সভাপতি

জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৯:১৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, জনগণের গণত্রান্ত্রিক অধিকার হনন করা হয়েছে। ভোটের অধিকার কেঁড়ে নেয়া হয়েছে। তাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যায়নি।

আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর লালদিঘী মাঠে বিভাগীয় জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণতন্ত্রহীনতা ও লুটপাট রুখো : দেশ বাঁচাও স্লোগানে দেশের ৮টি বিভাগে ‘দেশ রক্ষা অভিযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছে সিপিবি। এর অংশ হিসেবে প্রথম জনসভা হয়েছে চট্টগ্রামে।

ক্ষমতার লোভে খালেদা জিয়ার মতো শেখ হাসিনাও জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন মন্তব্য করে সেলিম বলেন, ওয়ান ইলেভেন এসেছিল খালেদা জিয়ার ক্ষমতার লোভের কারণে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে এবং ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এমন নির্বাচন করেন, যেখানে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নিবাচিত হন। পরেরবার তিনি ফন্দি পাল্টালেন। তিনি এবার ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর করে ফেললেন। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা ৬৮ হাজার গ্রামের ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে সংগ্রাম গড়ে তুলব।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত।

একদিকে ধনী লুটেরা, আরেকদিকে ৯৯ শতাংশ শ্রমিক-কৃষক, মেহনতী মানুষ। আমাদের সংগ্রাম হলো ওই ৯৯ ভাগ মানুষকে দেশের ৯৯ শতাংশ সম্পদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। এই সরকার দ্বারা লালিত কিছু কুলাঙ্গার এইদেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বিদেশে সম্পদ পাচার বন্ধ করার জন্য একাত্তর সালে যদি অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিসংগ্রাম করা যদি ন্যায়সঙ্গত হয়ে থাকে, বাংলার সম্পদ বাংলায় রাখার জন্য একইভাবে মুক্তিসংগ্রামের নতুন অধ্যায় রচনা করা সমস্ত জনগণের জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করতে চলেছি। এই ৫০ বছরে আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-সামরিক শাসন দেখেছি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটোই বুর্জোয়া লুটেরা দল। এদের হাতে মুক্তিযুদ্ধে অর্জন নিরাপদ নয়। এদের হাতে গরীব-মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবে না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেই দল এখন বিশ্বাসঘাতকদের নেতৃত্ব দেয়ার দলে পরিণত হয়েছে।

বিকল্প সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে সেলিম বলেন, বিকল্প শিক্ষানীতি কি হবে, বিকল্প বাণিজ্য নীতি কি হবে, বিকল্প কৃষিনীতি কি হবে, বিকল্প অথনৈতিক নীতি কি হবে- এটা আমাদের লেখা আছে। তারপরও আমরা সেটা আরও সুনিদিষ্ট করছি। আমাদের দলের ভেতরে, বামপন্থীদের ভেতরে যথেষ্ঠ সংখ্যক দক্ষ, অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, সাহসী ও পরীক্ষীত লোক আছে। তাদের দিয়ে বিকল্প ছায়া মন্ত্রীসভা গঠনের কাজও আমরা শুরু করেছি। একইসঙ্গে গ্রামে-গ্রামে, সারা দেশব্যাপী স্থানীয় ও জাতীয় দাবিতে আন্দোলনের ধারা জোরদার করব। সংগ্রামের ধারায় মেহনতী মানুষ ও সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করব।

জনসভায় সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলম বলেন, ৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর আমরা আওয়ামী লীগকে দেখেছি, বিএনপিকে দেখেছি। জামায়াতকে আমরা ১৯৭১ সালেই দেখেছি। আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে জনগণ ৩০ বছর দেখেছে। আমরা এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে বিকল্প শক্তি গড়ার সংগ্রামে নেমেছি। জোট-মহাজোটের বাইরে বিকল্প শক্তি গড়ার সংগ্রামে নেমেছি। আমরা জানি এই পথে সংগ্রাম কঠিন তবে অনিবার্য। এই সংগ্রামে জয়ী হয়ে বামপন্থীরা ক্ষমতায় যাবেই।

সিপিবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মৃণাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহার পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও আবদুল্লাহ আল কাফী রতন, কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, রাঙামাটির সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়ুয়া শঙ্কর, লক্ষ্মীপুরের সাধারণ সম্পাদক সুদেব শর্মা, কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক পরেশ কর, চাঁদপুরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিয়াজী, ফেনীর সাধারণ সম্পাদক মহিবুল হক রাসেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সভাপতি সাজেদুল ইসলাম এবং নোয়াখালী জেলার সভাপতি শহীদ উদ্দিন বাবুল।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিপিবির জেলা কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, উত্তম চৌধুরী, অমৃত বড়ুয়া, নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।

জনসভা শেষে লালদিঘী থেকে মিছিল নিয়ে সিপিবির নেতাকর্মীরা কোতোয়ালী মোড় ও নিউমার্কেট হয়ে স্টেশন রোড পর্যন্ত যান।

 

 

পূর্বকোণ/সারোয়ার-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট