চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নিয়মিত শিক্ষকদের অবহেলার ছাপ

ভাড়াটিয়া শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রাইমারি স্কুলের পাঠদান

নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ধোপাছড়িতে ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। তাছাড়া কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাড়াটিয়া শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের অভিযোগও রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষকের পদে রয়েছে ৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ ২ জনকে উপস্থিত পাওয়া যায়। সহকারী শিক্ষক শারমিন আকতার ডিপিএড প্রশিক্ষণে থাকলেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না সহকারী শিক্ষক সোহেল পারভেজ। বিদ্যালয়ে কোহিনুর আকতার নামে একজন ভাড়াটিয়া শিক্ষিকাকে পাঠদান করতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, সোহেল পারভেজ নেতা মানুষ, মাসে ৪ দিনও বিদ্যালয়ে আসেন না। শামুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এনামুল হক নামে একজন শিক্ষককে পাঠদানরত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি আমির হোসেনের পরিবর্তে পাঠদান করছেন বলে জানান। তাছাড়া রুনা আকতার ও জান্নাতুন নুর নামের ২ জন ভাড়াটিয়া শিক্ষককেও পাওয়া যায়। উত্তর ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক জামশেদুল করিম ২০০৩ সালে ৪ জুন যোগদান করার পর অদ্যবধি এ বিদ্যালয়ে রয়েছেন। তার সাথে সহকারী শিক্ষক হিসেবে আরো রয়েছেন, আছিয়া বেগম চৌধুরী তাকে বিদ্যালয়ে পাওয়া গেলেও উত্তম কুমার সূত্রধরকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদেকা ও সুমি আকতার জানান, জামশেদুল করিম মাসে ২/১ বার আসলেও উত্তম কুমার সূত্রধরকে শ্রেণিকক্ষে পান না তারা। এ বিদ্যালয়ে কোন ঘন্টা দেয়ার বেল নাই। তাছাড়া স্কুলের ব্যবহৃত ল্যাপটপটি নিজের বাসায় নিয়ে যান জামশেদ। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক জামশেদ বলেন, বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িতে নিয়ে গেছি। দীর্ঘসময় ধরে এই পাহাড়ি এলাকায় চাকরি করার সময় বেশ কয়েকবার বদলির আবেদন করেও কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল নুর চৌধুরী বলেন, ৫ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছে ৩ জন। সহকারী শিক্ষক জামশেদ ও উত্তম মাসে ২-১ বার আসেন। সহকারী শিক্ষক আছিয়া বেগমকে দিয়ে চলছে ১টি বিদ্যালয়ের ৬টি শ্রেণির কার্যক্রম। মংলারমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছসহ ৪ জন শিক্ষক রয়েছে। সেখান থেকে সহকারী শিক্ষক অজিত কান্তি দে প্রশিক্ষণে থাকায় ৩ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ে বিউটি খেয়াং নামে ১ জন ভাড়াটিয়া শিক্ষককে পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর বেগম, রিমু আকতার, রাজু খেয়াং, সুতপা ধর শিক্ষক ইউনুছ ও মিনু রাণী নাথ জানান, ভাড়াটিয়া শিক্ষক বিউটি খেয়াং ছাড়া অন্যান্য শিক্ষকদের চিনেন না তারা। চিড়িংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছে ৪ জন। তারা পালা করে ২ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন বলে স্বীকার করেছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি কুতুব উদ্দিন।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেন, উল্লেখিত ক্লাস্টারটি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মুনিরুদ্দিনের। এ সকল বিষয়ে তিনি ভাল বলতে পারবেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মনিরুদ্দিন চিড়িংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, প্রধান শিক্ষক দিদার ও সহকারী শিক্ষক এহসানের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোহেল পারভেজের বিরুদ্ধে শোকজ করা হয়েছে। শামুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির ডিপিএড প্রশিক্ষণে আছেন। উত্তর ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জামশেদ ও উত্তমের অনুপস্থিতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট