চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার প্রস্তুতি শুধুই মুখে !

নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ষ শুধু লক্ষণ আছে কিনা প্রশ্ন করেই বিমানবন্দরে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বিদেশ থেকে আগতদের ষ ১ হাজার ৫৬৯ জন চীনা নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ

ইমাম হোসাইন রাজু

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:১৪ পূর্বাহ্ণ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নির্ণয়ে চট্টগ্রামে নেই পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। সরকারি তিন হাসপাতালে ১৯ শয্যার পৃথক পৃথক কর্নার থাকলেও, নেই এ রোগের কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। শুধু লক্ষণ আছে কিনা, এমন প্রশ্ন করেই বিমানবন্দরে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বিদেশ থেকে আগতদের। এত নেই-এর মধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে তাদের রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এর সপক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছেন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌ ও স্থলবন্দরে সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম পুরাদস্তুর কাজ করে যাচ্ছে। ভাইরাস নির্ণয়ের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে থাকা একমাত্র থার্মাল স্ক্যানারটিও দীর্ঘদিন থেকে নষ্ট। যদিও বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা চলছে। এরপরও মেডিকেল টিমকে নির্ভর করতে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের ওপর। এদিকে, করোনাভাইরাস নির্ণয়ে পরীক্ষা না থাকায় পুরোপুরি ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হবে চট্টগ্রামকে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে তেমন কোন অসুবিধা হবে না। তাদের মতে, সম্প্রতি সীতাকু-ে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে চীনফেরত তিনজন করোনা ভাইরাস সন্দেহে ভর্তি হলেও তাদের স্যাম্পল ঢাকায় পাঠানো হয়। দু’দিনের মধ্যেই ফলাফল হাতে পাওয়া যায়। এতে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। সুখবর হল, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভাবতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির পূর্বকোণকে জানিয়েছেন, ‘ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি গ্রহণ

করা হয়েছে। বিমান বন্দর, নৌ বন্দরসহ সকল স্থানেই স্বাস্থ্য টিম কাজ করছে। কোন সন্দেহভাজন রোগী দেখলেই তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সবাই সতর্ক থাকলে আশাকরি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই’। রোগ নির্ণয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস নির্ণয়ের কোন যন্ত্র না থাকলেও ঢাকায় রয়েছে। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, দেশের অন্য কোথাও এটি নেই। একমাত্র ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইউনিস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) রয়েছে। এটি অত্যাধুনিক মেশিন। যদিও সীতাকু-ের ফৌজদারহাট বিআইটিডিএতে কক্ষ রয়েছে, তবে যন্ত্রপাতি নেই। এসব বিষয়ে সরকার ভাবছে। হয়তো স্থাপন করা হবে’।

এদিকে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে আসা যাত্রীদের করোনা ভাইরাস নির্ণয়ে মেডিকেল টিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। শুধুমাত্র ‘সন্দেহজন’ ব্যক্তিকে হ্যান্ডহেল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সকলকে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। যার কারণে শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনপ্রতি পরীক্ষা করতে হলে, যেমন সময়ের প্রয়োজন-তেমনি জনবল কাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সির্ভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কোন যাত্রীকে সন্দেহ হলেই তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সকলকে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু কয়েকটি দেশের সাথে সরাসরি ফ্লাইট থাকলেও বেশিরভাগই ঢাকা থেকে স্ক্যানিং হয়ে আসছে। আমাদের এখানে ঝুঁকি নেই। ওমান, দুবাই, জেদ্দা, মাস্কট, কলকাতাসহ যে কয়টি দেশ থেকে যাত্রীরা সরাসরি এখানে আসছেন, তাদের যাচাই-বাছাইয়ের পর, সন্দেহ হলে পরীক্ষা করা হচ্ছে’।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামে বসবাসরত চীনা নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া এসব নাগরিকদের মধ্যে সম্প্রতি কেউ চীনে গিয়েছে কিনা কিংবা তাদের কেউ অসুস্থ হয়েছেন কিনা- সেই বিষয়েও খোঁজ খবর নেন স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চীনা নাগরিকদের বড় একটি অংশ বন্দরনগরীতে কাজ করে থাকেন। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫৬৯ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। এদের মধ্যে নগরীতে ৬৫৪ জন, মীরসরাই ইকোনমিক জোনে ২৬৫ জন এবং বাঁশখালী গ-ামারা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৬৫০ জন চীনা নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। তাদের সকলের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইউনিস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট