চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সেই মাছের খাবার ফেরত যাচ্ছে

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

মাছের খাদ্য (ফিশ ফিড) ঘোষণা দিয়ে শূকরের বর্জ্য ও হাড়যুক্ত মিট এন্ড বোন মিল (এমবিএম) মিশ্রিত মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর আমদানি নিষিদ্ধ ৩৭টি চালান পণ্য ফেরত পাঠাতে হচ্ছে আমদানিকারকরা।
২০১৯ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৩ জন আমদানিকারক ৩৭টি চালানের মাধ্যমে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, বেলজিয়াম ও শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ৭৫ লক্ষ ৩১ হাজার ইউএস ডলারের এসব আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এই ৩৭টি চালানে প্রায় ৮ হাজার ৫৩ টন মাছের খাবার ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা পণ্য চালানগুলোর আমদানিকারক হলো আয়েশা কর্পোরেশন, স্প্রেক্টা হ্যাক্সা ফিড লিমিটেড, প্রমেক এগ্রো এন্ড ফিড প্রোডাক্টস লিমিটেড, ফিশটেক বিডি লিমিটেড, একোয়াটেক এগ্রো বিডি লিমিটেড, এডভান্স এগ্রোলেক বাংলাদেশ, কোয়ালিটি ফিডস, আর আর পি এগ্রো ফার্ম, ইন্টার এগ্রো বিডি, ম্যাগনিফাই এগ্রো লিমিটেড, মিশাম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ভি এন এফ এগ্রো লি, এম কে এ হ্যাচারি, মিশাম ফিড, এ জে ট্রেডিং, পিয়াল এন্টারপ্রাইজ, ডায়মন্ড এগ লি. মাতব্বর ট্রেডার্স, ইউরো এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল, আরিফাস বাংলাদেশ লিমিটেড, জিএস এনিমেল সাইন্স, আনিকা এগ্রো প্রোডাক্টস এবং ফ্যালকন এন্টারপ্রাইজ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ গত বছরের জুন থেকে ফিশ ফিড ঘোষণায় আসা চালানগুলো নিজস্ব পরীক্ষাগারে রাসায়নিক পরীক্ষা শুরু করলে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি নিষিদ্ধ এমবিএম আসার বিষয়টি ধরা পড়ে।
আমদানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের সিভাসুর পোল্ট্রি রিসার্স এন্ড ট্রেনিং সেন্টার), রাজধানীর আইসিডিডিআরবি এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার পরও ফিশ ফিডের চালানে বোভাইন ও প্রসিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
পরবর্তিতে আমদানিকারকরা এসব পণ্যের ছাড় নিতে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু উচ্চ আদালত এসব চালানে মিট এন্ড বোন মিল থাকলে পণ্য না ছাড় দেয়ার বিষয়ে রায় দেন। ফলে আমাদানি নিষিদ্ধ এমবিএম ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে আমদানিকারকরা।

এরই মধ্যে মিট এন্ড বোন মিলের চালানগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ফেরত পাঠাতে চট্টগ্রাম ম্যাগনিফাই এগ্রো লিমিটেড, ফিশটেক বিডি লিমিটেড, এডভান্স এগ্রোটেক বাংলাদেশ, ভিএনএফ এগ্রো লিমিটেড ও একোয়াটেক এগ্রো বিডি লিমিটেড চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারের কাছে আবেদন করে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের পণ্য চালান পুনঃ রপ্তানির আদেশ দেয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম জানান, ফিশ ফিড ঘোষণা দিয়ে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ও আমদানি নিষিদ্ধ উপকরণযুক্ত কিছু চালান খালাসের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সর্বশেষ কিছু আমদানিকারক সংশ্লিষ্ট দেশে চালানগুলো পুনঃরফতানির উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, পুনঃরফতানি ক্ষেত্রে আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসহ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। এগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে এমন ৫-৭টি চালান পুনঃরফতানির আবেদনপত্র আমরা পেয়েছি। যারা পুনঃরফতানি করতে ব্যর্থ হবে সেগুলো কাস্টম আইন ও বিধি অনুযায়ী ধ্বংস করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ফিশফিড আমদানির নামে শূকরের বর্জ্যযুক্ত মুরগির খাবার নিয়ে আসার বিষয়টি গত বছরের ২৪ জুলাই প্রথম গণমাধ্যমের নজরে আনেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম। কাস্টম হাউজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাস্টম কমিশনার জানিয়েছিলেন, এ সমস্ত ক্ষতিকর খাবার খেলে মুরগীর বাচ্চা দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতিকর পশুখাদ্য আমদানির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট