চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতেই মোহরার উন্নয়ন!

প্রধান সমস্যা : জলাবদ্ধতা, মাদক ও যানজট আয়তন : ৬ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা : ৩ লাখ ৬০ হাজার ভোটার : ৫৯ হাজার ৯৮৬ জন

আল-আমিন সিকদার

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ

অন্যসব ওয়ার্ডের মত ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার নিজের আগাম বার্তার জানান দিতে শুরু করেছেন ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সাড়ে ৩ লাখ জনসংখ্যার এই ওয়ার্ডের সকল সমস্যার সামাধান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের সমর্থন চাইছেন তারা। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে সংক্ষিপ্ত জীবনী (সিভি) নিয়ে ছুটছেন নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে।

সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ তুলে ধরতে মোহরা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, এই ওয়ার্ডে দলীয় টিকিট পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের লিস্টটা একটু বড়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন ৬ জন। এদিকে বিএনপির টিকিট চেয়েছেন মাত্র দুই জন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. অলিদ চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ফারুক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক খালেদ হোসেন খান (মাসুক), সাবেক নগর ছাত্রলীগের তথ্য সম্পাদক কাজী নুরুল আমীন মামুন ও দিদারুল আলম। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জানে আলম জিকু। এদিকে এই ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও দলের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম ও আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম।

প্রার্থীরা ওয়ার্ডের সকল সমস্যার সামাধান দিবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘ভোটের আগে এমন স্বপ্ন সবাই দেখায়। জিতলে তাদের দেখা পাওয়াও মুশকিল।’ কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় রবিউল ইসলাম নামে এক স্থানীয় যুবক এই অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘কাপ্তাই রাস্তার মাথায় ওপেন মদ বিক্রি হয়। তাদের নাকি লাইসেন্স আছে। যদি লাইসেন্স থাকেও এমন একটা গুরত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডের পাশে এটি যুব সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি। এছাড়াও এই ওয়ার্ডে মাদকের ছড়াছড়ি রয়েছে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
মোটরসাইকেল চালক নুরুল আজিম বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা হওয়ায় গাড়ী চলাচল করতে সমস্যা হয়, ফলে সৃষ্টি হয় জ্যামের। যে জায়গায় আমরা ৫ মিনিটে পৌঁছাতে পারতাম সেখানে আমাদের সময় লাগছে ১৫ মিনিট। আর ধূলাবালির সমস্যাও তো আছেই। যার ফলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়ির পার্টসের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হচ্ছে। যে পার্টস ১ বছর টেকার কথা সেই পার্টস ২ মাসেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা মহরম আলী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার রাস্তার অবস্থা ভাল না। রাস্তা করছি, করবো এই বলে বলে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে না। যার ফলে আমরা এতদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। কিছুদিন পর পর রাস্তার উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। আমরা চাই এই ভোগান্তি যাতে না হয়। আর রাস্তা যদি কাটতেই হয় তাহলে যেন সিডিএ, ওয়াসা এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ের মাধ্যমে করা হয়। দু দিন পর পর যাতে রাস্তা কাটা না হয়।’
স্থানীয়দের করা এসব অভিযোগের প্রমান মেলে ওয়ার্ডে গিয়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তার বেশিরভাগ অংশই ভাঙা। আবার ভাঙা রাস্তার দুই পাশেই রাস্তা দখল করে পার্কিং করে রাখতে দেখা যায় অনেকগুলো লোকাল বাস। ছিল ট্রাক আর মিনি পিকআপও। যার কারণে প্রায়শই সৃষ্টি হয় যানজটের। তবে সব থেকে বেশি যানজট লেগে থাকে কাপ্তাই রাস্তার মাথার মোড়টিতে। এ মোড়ের বিশাল একটি অংশ অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডের দখলে থাকায় সৃষ্টি হয় যানজটের।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা ও অভিযোগ আর ওয়ার্ডের উন্নয়ন সম্পর্কে বর্তমান কাউন্সিলরের কাছে জানতে চায় দৈনিক পূর্বকোণ। কাউন্সিলর মো. আজম বলেন, ‘কাপ্তাই রাস্তার মাথায় অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড এবং প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করার বিষয়ে স্থানীয়দের যে অভিযোগ সেটি অনেক দিনের। মূলত পুলিশ প্রশাসনের দুর্বল অবস্থানের কারণে অবৈধ সিএজি স্ট্যান্ড এখনও আছে। আর যারা কাপ্তাই রাস্তার মাথায় প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করছে তাদের কাছে লাইসেন্স আছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করছি, আশাকরছি খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে সমাধান করা সম্ভব হবে।’
এছাড়া মাদক নির্মূলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সিটি মেয়র ৪১টি ওয়ার্ডের সকল কাউন্সিলরকে নিয়ে একটি কমিটি করেছেন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে লালদিঘির ময়দানে এ নিয়ে এক গণসমাবেশ করার কথাও রয়েছে। সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আরো অনেকে উপস্থিত থাকবেন। আশা করছি, এই ধরণের আরো বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে মাদক নির্মূল করতে আমরা সফল হব।’
এদিকে গতবারের নির্বাচনী ইশতিহারে তিনি বলেছিলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্যে মহাশ্মশান ও বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কথা। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে মহাশ্মশান করার জন্য প্ল্যানিং এবং টেন্ডার সবই হয়েছিল কিন্তু তাদেরই কিছু মানুষের বিরোধিতার কারণে এই কাজটি করা সম্ভব হয়নি। এ.কে. খান গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় উত্তর মোহরায় বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু সেটিও করা সম্ভব হয় নি রাস্তা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে। কিন্তু এবার নির্বাচিত হলে আমার দেয়া এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো।’

আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে ২০১০ এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। দু’বারই জয়লাভ করি। এবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবো। তবে দল যদি মনোনয়ন না দেয় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করবো। তবে এবারই শেষেবারের মত নির্বাচন করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫ বছরে আমি ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। এছাড়াও আরাকান সড়ক ও কালুরঘাট শিল্প এলাকায় আরো ৫০ কোটি টাকার কাজ করেছি।’
ওয়ার্ড নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিকল্পনা
মো. অলিদ চৌধুরী। বর্তমানে তিনি ৫নং মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য। মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে। তবে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার হয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। ২০১৫ সালে প্রথম বার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। তিনি বলেছেন এলাকার ময়লা পরিস্কারে কাজ করা, জঙ্গি ও মাদক মুক্ত সমাজ গড়াসহ অবহেলিতদের জন্য কাজ করার কথা। তিনি বলেন, গত ৫ বছরে আমাদের এলাকায় প্রতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর (স্কুল-কলেজ) উন্নয়ন হলেও সামাজিক অবকাঠামোর তেমন কোনো উন্নয়ন হয় নি। আমাদের ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত কাপ্তাই রাস্তায় প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করা হয়, যার ফলে এলাকায় মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাস বেড়ে গেছে। আমি নির্বাচিত হলে এই সকল সমস্যা সমাধানে কাজ করব।
৫নং মোহরা বিএনপির সভাপতি জানে আলম জিকু মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপি থেকে। দল হতে মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা সহ এলাকাবাসীর জন্যে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড করার কথা জানিয়েছেন তার নির্বাচনী ইশতিহারে। তিনি বলেন, ’আমি দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বিএনপির সাথে জড়িত আছি, আর তাই দল হতে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্যে আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমি চাই নির্বঅচিত হয়ে জনগণের জন্যে কাজ করতে। যার মধ্যে রয়েছে যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা সহ এলাকাবাসীর জন্যে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কর্মকা-।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দ নজরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে প্রথম বারের মত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে এবং জয়লাভ করলে মোহরা ওয়ার্ডকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদাকমুক্ত করবো। পাশাপাশি ভাঙা রাস্তাঘাট সংস্কারে কাজ করবো।’

মো. ফারুক বলেন, ‘২০১০ সালে একবার কাউন্সিলর নির্বাচন করেছিলাম। তখন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছি। কিন্তু ২০১৫ সালে সামগ্রিক প্রস্তুতি না থাকায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করিনি। এবার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্বাচন করতে তৈরি রয়েছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবো। এবং নির্বাচিত হলে এই ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত, পরিবেশবান্ধব একটি ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলবো। থাকবে বেকারত্ব দূর করার চেষ্টা।’
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক খালেদ হোসেন খান (মাসুক) বলেন, ‘এবার প্রথম নির্বাচনে যাচ্ছি এবং দলের পূর্ণ সমর্থন আশা করছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডে যে সমস্যা আছে তা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমার ওয়ার্ড শহরের আওতাভুক্ত হলেও এখানে শহরের আধুনিকতার বা উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তাঘাট এখনো অনুন্নত। এগুলোর উন্নয়ন করার পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করতেও কাজ করবো।’
কাজী নুরুল আমীন মামুন বলেন, ‘দল মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচনে জয় লাভ হলে এলাকা থেকে দখলবাজ, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুদের নির্মূল করবো। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবো।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট