চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

কাজল সরকারের ‘ইন্ধন’ থাকায় বন্ধ হয় না ব্যাটারি রিকশা

চান্দগাঁও এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ

ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা চলাচলের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজল সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে চলছে ব্যাটারি রিকশা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হলেও কাজল সরকারের ইন্ধনে ফের চলাচল শুরু হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, এখান থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা নেন তিনি। তাই কোনভাবেই বন্ধ হয় হচ্ছে না ব্যাটারি রিকশা। নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিএন্ডবি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর ৫ মাস আগে বন্ধ হয়েছিল অবৈধ রিকশা চলাচল। কিন্তু মাস দু-এক আগে পুনরায় রিকশা চলাচল শুরু হয়। কালুরঘাট ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের প্রত্যক্ষ ইশারায় ব্যাটারি রিকশা চলাচল শুরু হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক পূর্বকোণে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর ফের চলাচল শুরু হয় অবৈধ ব্যাটারি রিকশার। প্রধান সড়ক ছাড়াও উপ-সড়ক এবং অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব

রিকশা। গতকাল দেখা যায়, আরাকান সড়কের কালুরঘাট সেতু থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা সংলগ্ন মাজার গেট পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি রিকশা। এছাড়াও বিভিন্ন গলিতেও চলছে এসব রিকশা। জানা যায়, মহিউদ্দিন, বেলাল, ইসমাইল, লিটন ও সেলিম কোম্পানি নামে ৫ জন তা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা পুলিশের নামে রিকশাপ্রতি দৈনিক একশ টাকা চাঁদা আদায় করেন। পুলিশ ছাড়াও টাকার ভাগ পায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিদ্যুৎ বিভাগ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। মহিউদ্দিন কোম্পানি ইতিপূর্বে দাবি করেছিলেন, ‘ভেতরে ভেতরে চুরি করে চলাচল করে। মেইন রোডে আসে না।’ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লাইন খরচের জন্য ৫০-৬০ টাকা করে নিই।’

এদিকে, সিএন্ডবি এলাকায়ও চলাচল করে শতাধিক ব্যাটারি রিকশা। দিনে সিএন্ডবি মোড় ফায়ার সার্ভিস থেকে বিসিক ও হামিদচর এলাকায় চলাচল করে। রাত ৮টার পর থেকে সিএন্ডবি মোড়ে প্রধান সড়কে চলে আসে। ওসমানিয়াপুল, বিসিক ও সিএন্ডবি-এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন ইসমাইল কোম্পানি। আর পাঠানিয়া এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন লিটন। লাইন পরিচালনা করেন মোজাম্মেল। মোজাম্মেল আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানায় স্থানীয়রা। প্রতি রিকশা থেকে দৈনিক একশ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।

দেখা যায়, কালুরঘাট, মোহরা, মৌলভী পুকুর পাড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা মাজার গেট, সিএন্ডবি মোড়, সিএন্ডবি শিল্প এলাকা, হামিদচর, ওসমানিয়ার পুল, গোলাপের দোকান, কুয়াইশ এলাকায় বিভিন্ন সড়ক, উপ-সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিরিকশা। নগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক আরাকান সড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বড় ও মাঝারি যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও যানজট লেগে রয়েছে।

২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার জন্য দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চান্দগাঁও এলাকায় নির্বিঘেœ চলাচল করছে ব্যাটারি রিকশা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাধিক পুলিশ সদস্যের ব্যাটারি রিকশা রয়েছে। তবে ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নেপথ্যের নায়ক হচ্ছেন কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজল সরকার। কাজল সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন। তখন থেকে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বেপরোয়া ছিল। কাজল সরকারের ইন্ধনে চান্দগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়কে চলছে ব্যাটারি রিকশা। পুলিশের নামে চাঁদার বড় অংশের ভাগ নেন কাজল সরকার। কাজল সরকার এখন কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ। রাস্তার মাথা ফাঁড়ির ইনচার্জ এখন মো. কাদের। দুই ফাঁড়ির ইনচার্জের সহায়তায় ফেল চলাচল করছে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা। সেখান থেকে আদায় করা চাঁদার বড় অংশে ভাগ বসান দুই ফাঁড়ির ইনচার্জ।
কাজল সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়ার পরও গতকাল ফোন রিসিভ করেননি তিনি। তবে ইতিপূর্বে তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা চলাচলের বিষয়টি নজরে আসেনি। মোবাইল পার্টি দিয়ে বন্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ পুলিশের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে কাজল সরকার বলেন, ‘পুলিশের নাম বিক্রি করে চলাচল করছে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট