চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পিঠা উৎসবে ‘ঝাল জামাই’র কদর

হালিশহরে শেষ দিনে পিঠা প্রেমীদের ভিড়

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:২৭ পূর্বাহ্ণ

বিকেলের মিষ্টি আলো আর মৃদু ঠা-া বাতাসের মাঝে প্রায় হাজারখানেক পিঠা প্রেমিদের আগমনে সরগরম হয়ে উঠে হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠ (বিডিআর মাঠ)। যেন পিঠা প্রেমিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে দুই দিনের এই ‘মোজো পিঠা উৎসব’। আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড (এএফবিএল) এর কোলা ব্র্যান্ড ‘মোজো’ এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। গতকাল (শনিবার) ছিল উৎসবের শেষদিন। চট্টগ্রামে আয়োজিত ‘মোজো পিঠা উৎসবে’ অংশগ্রহণ করে দেশের আটটি বিভাগ থেকে আসা ৩০টি পিঠার দোকানি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দোকানিরা মেলায় উপস্থাপন করে নানা রকমের পিঠা। নিজ বিভাগের জনপ্রিয় পিঠাসহ তুলে ধরে নানান স্বাদের বাহারি সব পিঠা। মেলায় পিঠার স্বাদ আর রঙ্গে নজর কাড়ে চাপাইনবাবগঞ্জের ‘ঝাল জামাই’ পিঠা। এ পিঠা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিন্নি চালের গুড়ো। সাথে ডিম ও সবজি। রাজশাহীর ‘ঝাল দুধমাথা পিঠা’ ‘কুমড়োর ফুল দিয়ে ঝালপুরি, বি-বাড়িয়ার ‘চিতল দুধ দইমাখা পুরি’, সিলেটের ‘ডিম পুরি, মিষ্টি, সবজির কোফতা,

মাংসের চপ ও ভাপা পিঠা। আরো আছে কুষ্টিয়ার খেজুরের রসের সাথে বিন্নি চাল দিয়ে তৈরি পায়েস ও নানা ফলের আচার।
চাপাইনবাবগঞ্জের বুলবুল ফরিদ বলেন ‘ঝাল জামাই’ নামে এ পিঠাটি আমাদের এলাকায় খুব জনপ্রিয়। পিঠাটির ঝাল জামাই নাম হওয়ার পেছনে একটি কাহিনীও আছে। আমাদের মা-দাদীদের মুখে শুনেছি সেই গল্প। কতটা সত্য তা জানি না। অনেক বছর আগে চাপাই নবাবগঞ্জের এক রাজার মেয়ের বিয়েতে এ পিঠা প্রথম এক বিদেশি রাঁধুনি তৈরি করেন। সেই বিয়েতে এ পিঠা খেয়ে সবাই প্রশংসা করেন। সেই থেকে এ পিঠা ‘ঝাল জামাই’ নামে পরিচিত হয়ে আসছে। এখনো নতুন জামাই আসলে এ পিঠা তৈরির ঐতিহ্য চলমান।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই মেলায় আসছে। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ আবার বন্ধু-বান্ধবী মিলে দল বেধে আসছে পিঠা খেতে। বিকেল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কানায় কানায় ভরা ছিল হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠের পিঠা উৎসব। বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পিঠার পাশাপাশি মেলায় দেখা যায় ভাপা পিঠা, চিতল, পাটিশাপটা, পায়েস, পুলি, পাক্কন, নারকেল পুরি, খেজুরের রসের পিঠা, ছই পাক্কন, নারকেলের মোয়া, চালের হালুয়া ও নারকেল পুলি পিঠা।

পিঠা খেতে পরিবার নিয়ে মেলায় আসেন কেডিএস গ্রুপের কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল পারভেজ ও স্ত্রী শিক্ষিকা তাহমিনা পারভেজ। তাঁরা বলেন, শীত আর পিঠা এ যেন একে অন্যের পরিপূরক। শীত এলেই মনে পড়ে নানা রকম পিঠা-পুলির কথা। আগে গ্রামে শীতের শুরুতে নবান্নে আমন ধান ঘরে তোলেই শুরু হত নানারকম পিঠার উৎসব। মায়ের হাতের কত রকমের পিঠা খেয়েছি। এখনতো সেসব দেখাই যায় না। এখানে মেলায় অনেক পুরনো পিঠা দেখছি, খেয়েছি আর ঘরের জন্যও কিনেছি।

মেলার আয়োজক কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘মোজো’ সারাবছরই বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবারে বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৩০টি পিঠার দোকান নিয়ে চট্টগ্রামে দুই দিনের এ পিঠা মেলার আয়োজন করে। মোজো পিঠা উৎসবে ছিল নানা স্বাদের পিঠার সংগ্রহ। পিঠা প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে যে সবচেয়ে বেশি পিঠা খেতে পারবে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে। এছাড়াও ছিল কনসার্ট, নানান লোকজ প্রদর্শনী, নাগরদোলা ও ফিউশন কনসার্টসহ শিশুদের ফান এন্ড গেমস। মেলজুড়ে ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট