চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চীন থেকে জ্বর নিয়ে আসা দুই ছাত্র ফৌজদারহাট হাসপাতালে ভর্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা হ সীতাকু-

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের দুই উপজেলার দুই যুবক নাঈম উদ্দিন (২৪) ও আশিফুল মাওলা রিহান (২৭) জ্ঞান অর্জনের জন্য গিয়েছিলেন চীনে। লক্ষ্য অনুযায়ী সেখানে তাদের পড়াশুনাও চলছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাধাল করোনা ভাইরাস। হঠাৎ সে দেশে এই ভাইরাসটি ভয়ংকর আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আতংকে গত ২৪ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তারা। কিন্তু এখানে আসার পর জ্বরে আক্রান্ত হন দু’জনেই। ফলে নিজেরা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন এমন আশংকায় দু’জনেই ছুটে আসেন সীতাকু-ের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডি’তে (ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ)। এখানে এসে তারা নিজেদের আশংকার কথা জানালে কর্তৃপক্ষ সচেতন হয়ে উঠেন। তারা বুধবার রাতে দু’জনকেই

সেখানে ভর্তি করে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেন। ছাত্র নাঈম উদ্দিনের বাড়ি রাউজান উপজেলার গহিরায় এবং আশিফুল মাওলা রিহানের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ গ্রামে।
এদিকে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐ দুই ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকে গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত হাসপাতালে অন্যান্য বিভাগে ভর্তি থাকা সাধারণ রোগী, তাদের স্বজন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট অসংখ্য মানুষ এ দুই ছাত্রকে সারাদিন করোনা রোগী সন্দেহে নানান বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ইতিমধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন যুবকদ্বয়। এখন কেউ তাদের স্বাভাবিক প্রশ্ন করলেও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন।
অন্যদিকে হাসপাতালে আতংকের কারণে নাঈম ও আশিফুল এ হাসপাতালে এসে ভর্তি হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের শরীরে করোনার কোন লক্ষন দেখছেন না ডাক্তাররা। তবুও এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে তাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন সংশ্লিষ্ট ডা. শাকিল। তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইডিসিআর এ প্রেরণ করা হয়েছে। সেখানে পরীক্ষায় কি রিপোর্ট আসে তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিআইটিআইডি’র সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, আসলে তারা দু’জন চীন থেকে আসার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনা ভাইরাসের ভয়ে আতংকিত হয়ে নিজেরাই হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। তবে এখানে তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। এরপরও যেহেতু তারা চীন থেকে এসেছেন এবং এ রোগের আতংকে আছেন তাই তাদের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে সরকার সংশ্লিষ্ট মহলের দিক নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ডা. মামুনুর রশিদ আরো বলেন, এ মুহূর্তে সারাবিশ্বের মানুষ করোনা ভাইরাসের ভয়ে আতংকিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সারাবিশ্বে সে দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা আমাদেরকে এ বিষয়ে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আর চট্টগ্রামের মধ্যে একমাত্র ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালটিতেই করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার। আমরাও সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সকল ডাক্তারকেই এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তাহলে এখানে আসা রোগীরাও ভালো সেবা পাবে। এ বিষয়ে আতংক না ছড়িয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এসব বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এম এ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ওই দুই ছাত্র বুধবার রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে এলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে ভর্তি করা হয় এবং তাদেরকে আলদাভাবে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হবার মত যথেষ্ট লক্ষন এখনো দেখা যায়নি। তাই আতংকিত হবার কোন কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে এই দুই ছাত্র ভর্তি হবার পর তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ একজন ‘সীতাকু-ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দুই ছাত্র’ এমন তথ্য ছড়িয়ে দিলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে জানা যায়, আসলে তারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট