চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নির্বাচনী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

সম্মানিভাতা নিতে গিয়ে শিক্ষকদের চরম দুর্ভোগ সাতকানিয়ায়

নিজস্ব সংবাদদাতা হ সাতকানিয়া

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪ মাসের মাথায় মক ও ডেমো ভোটের সম্মানি নিতে গিয়ে চরম দুর্ব্যবহার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন নির্বাচনের দায়িত্বপালনকারী শিক্ষক সমাজ। বাদ যায়নি উপজেলার বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তারাও। নির্বাচন কর্মকর্তার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কয়েক সহ¯্রাধিক নির্বাচনী কর্মকর্তাকে সম্মানি নিতে আসতে বলায় উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে দেখা গেছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ফলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে শিক্ষক সমাজ ও নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাঝে। নির্বাচন কর্মকর্তার এহেন আচরণে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীরা এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে অতীতেও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শেখ ফরিদের বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থীদের বিভিন্ন হয়রানি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কার্য সম্পাদনের অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মক ভোটের জন্য ২ দিন এবং ডেমো ভোটের জন্য ১ দিন সময় নির্ধারণ করে। এই ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও ভোটদানের জন্য ভোটারদের এ প্রশিক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সম্মানি ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকল ধরনের ভাতা প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে পরিশোধ করা হলেও সাতকানিয়া নির্বাচন অফিস তা পরিশোধ করেননি।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকার ভোটের প্রশিক্ষণের কোন টাকা প্রদান না করায় তখন দেয়া সম্ভব হয়নি। পরে টাকা পাওয়া গেলে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে সম্মানি দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে বিতরণ শুরু করা হয়।

এদিকে প্রশিক্ষণের সম্মানি বিতরণ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন অফিস ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রথমত এ টাকা বিতরণে কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই, পুরো উপজেলার দায়িত্বপালনকারী সব শিক্ষকদের একসাথে নিয়ে আসা হয় নির্বাচন অফিসে। ফলে ছোট্ট বারান্দায় মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অস্থা হয়। এ পরিস্থিতিতে অনেকে সম্মানির টাকা না নিয়ে ফিরে গেছেন। আবার অনেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত তিনবার এসেও কোন টাকা নিতে পারেননি। তাছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তা মৌখিক নোটিশে শিক্ষকদের গত ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সম্মানির টাকা না নিলে আর দেয়া হবে না বলে জােিনয় দেন। যার কারণে সব শিক্ষকরা একসাথে বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে নির্বাচন অফিসে ভিড় করেছেন। গত ৩দিন ধরে এ অবস্থায় উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অঘোষিত ছুটি পালন করা হয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, যারা চলে গেছেন কিংবা আসতে পারেননি তারা পরবর্তীতে আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাদের সম্মানির টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।

অপরদিকে শিক্ষদের অভিযোগ, পুলিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বপালনকারীদের সম্মানি ভাতা থেকে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা করে কর্তন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ১০% ভ্যাট ও পূর্বে ১০০ টাকা বেশি প্রদান করা হয়েছে তা’ কেটে নেয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে ভ্যাট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের কর্তনের বিষয়টি শিক্ষকরা বুঝতে পারলেও ১০০ টাকা অগ্রিমের বিষয়টি সম্পর্কে কেউ কিছুই জানেন না। শিক্ষকরা বলছেন এটা একটা শুভঙ্করের ফাঁকি।

নির্বাচন অফিসের এ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের নজরে আসলে তাঁরা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্মানি বিতরণের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্র ভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে নোটিশ বোর্ডে সিডিউল টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে শিক্ষক শাহ আলম, শহিদুল ইসলাম, মাওলানা বদরুল ইসলাম ও নুর বানু আক্তার অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন অফিসের চরম গাফিলতি রয়েছে। গত ভোটের ভাতা প্রদানের নামে শিক্ষকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা শিক্ষকদের কষ্টের সীমা নেই। কোন সিডিউল না থাকায় অনেকেই সকাল থেকে ভাতার জন্য বসে ছিলেন।

এদিকে শিক্ষকসহ অনেকে নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, সাতকানিয়া নির্বাচন কর্মকর্তা কোন কাজই টাকা ছাড়া করেন না। কিছুদিন আগে আমার ছেলে এনআইডি’তে নাম ভুল আসায় সংশোধনের জন্য তার পরামর্শমত সব প্রক্রিয়া শেষ করেছি। যখন আমার ছেলের সংশোধিত এনআইডি নির্বাচন অফিসে আসে। তখন আমার কাছে ঢাকা হতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস থেকে ডেলিভারি নেয়ার জন্য এসএমএস দেয়া হয়। আমি নির্বাচন অফিসে গেলে তিনি আমাকে ঘুরাঘুরি করতে থাকেন। অবশেষে ২ হাজার টাকা দিলে আমার ছেলের সংশোধিত এনআইডি কার্ড দেন।

উত্তর ছদাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৭ নম্বর কেন্দ্রে দায়িত্বপালনকারী ছদাহা খায়রিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক রুপেশ দে অভিযোগ করে বলেন, আমার সম্মানি ভাতা নিতে এসে দেখি আমার হাজিরা সিটে আমার উপস্থিতি স্বাক্ষর নেই। নির্বাচন কর্মকর্তা বলছেন কেন্দ্র থেকে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ওই কেন্দ্রে ৩ জন অনুপস্থিত। যার কারণে আমাকে সম্মানি দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ৮৭ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন জানান আমার কেন্দ্রে কেউ অনুপস্থিত ছিলেন না।
এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শেখ ফরিদ সম্মানি ভাতা বিতরণে অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, আসলে জনবল কম হওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আমি বুঝতে পারিনি একসাথে এত লোক চলে আসবে। তবে তিনি বিভিন্ন কাজে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট