চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সরকারি জমি দখলের মহোৎসব থামাবে কে?

বায়েজিদ ফৌজদারহাট বাইপাস হ রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজনও রয়েছে হ বসতি গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারাও!

নাজিম মুহাম্মদ

৩০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ছয় কিলোমিটার বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কের আশপাশে সরকারি জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। দখলদারের মধ্যে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজনও রয়েছে। নগরীর শেরশাহ থেকে সীতাকু-ের ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে নতুন বাইপাস সড়ক। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রায় ১৮ বছরের চেষ্টায় ৮০ ফুট প্রশস্ত এই বাইপাসটি নির্মাণ করছে সরকারি পাহাড়ি জায়গার ভেতর দিয়ে। এরমধ্যে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দখল করে দেয়ার অভিযোগে বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মো. নাসিম হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছেন হেদায়েত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন উক্ত ব্যক্তি।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, শেরশাহ- ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কের আশপাশের বেশিরভাগ জায়গাই সরকারি অথবা খাস জমি। বায়েজিদ থানা এলাকায় সড়কের জায়গা তেমন বেশি পড়েনি। বেশিরভাগ অংশ সীতাকু- ও আকবরশাহ থানা এলাকায় পড়েছে। এই জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে থানায় নিয়মিতই অভিযোগ আসে। তিনি বলেন, জায়গার বিষয়টি দেওয়ানি। তাই জায়গা সংক্রান্ত ব্যাপারে যাতে কোনো ফৌজদারি অপরাধ না হয় তা আমরা চেষ্টা করি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কী পরিমাণ সরকারি জায়গা এরই মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে, তা নিয়ে কোনো জরিপ সেখানে নেই। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও উদ্যোগ নেই বলে রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান।

গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, শেরশাহ অংশ দিয়ে প্রবেশের একটু পরেই বাইপাস সড়কের বাম পাশে একটি নির্মাণ সংস্থার বিশাল প্রকল্প। এরপরই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর রয়েছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান (এইউডব্লিউ) এর প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত জায়গা যেটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দুইজনই পৃথক পৃথক সময়ে উদ্বোধন করেছিলেন। মূলত এই জায়গার পরই সড়কের দুই পাশে দখলদারদের উৎপাত। প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ জুড়ে সরকারি জায়গা কাঁটা তার দিয়ে নানা অংশে ঘেরাও দেয়া হয়েছে। আধাপাকা ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। সড়কটির দুইপাশেই উঁচু নিচু সরকারি পাহাড়। এগুলো দখল হলেও মাটি কেটে সমতল করা কার্যত অসম্ভব। তাই নতুন কৌশল নিয়েছে দখলকারীরা। তারা পাহাড়ের উপরের অংশ কেটে মাটি আলগা করে রেখে দিয়েছে। বৃষ্টি হলে এই মাটি ধুয়ে নেমে যায়। তখন পাহাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্রমশ সমান হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বিএনপি সরকারের আমলেই শেরশাহ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে সিডিএ। এজন্য প্রায় ১৫টি ছোটবড় পাহাড় কাটতে হয়। কিন্তু বর্ষায় বৃষ্টিতে বারবার পাহাড় ধসের কারণে এই বাইপাস নির্মাণ ব্যাহত হয়। এরমধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান এর ক্যাম্পাসের জন্য সড়কটির নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়। সরিয়ে নিতে হয় কিছু অংশ। এরপর দুইদফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমানে সড়কটির বেশিরভাগ অংশের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের কাজ শেষে আগামী মার্চে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে। বাইপাসটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা।
সড়ক নির্মাণে সময় লাগলেও দখলদাররা ওই সড়কের দু’পাশে সরকারি পাহাড় দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে সময় নেয়নি। ২০০৬ সালে সেখানে ছিন্নমূল হকার্স সমবায় সমিতির ব্যানারে অন্তত ৫০ হাজার লোক ওইখানে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করে। বাইপাস সড়ক ও আশেপাশের জায়গার একাংশ পড়েছে নগরীর বায়েজিদ থানা ও আকবর শাহ থানার অধীনে। অন্য অংশ পড়েছে জেলার সীতাকু- থানা এলাকায়। ফলে ওই এলাকায় তিন থানার কোনোটিই সক্রিয় নয়। এই সুযোগে অপরাধী, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী দখলদার ও সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি পাহাড় দখল করে বসবাসকারীদের একটি বড় অংশ রোহিঙ্গা। দখলদাররা বিভিন্ন সময় নিজেদের প্রয়োজনে তাদের ব্যবহার করে। বিগত দিনে সেখানে র‌্যাবের একাধিক অভিযানে ছিন্নমূল হকার্স নেতা আলী আক্কাসসহ একাধিক ব্যক্তি নিহত হন। কিন্তু দখলদাররা ওই এলাকা ছাড়েনি।

আকবর শাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাইপাসের এলাকায় আমার থানার জায়গা খুবই কম। ফলে সেখানে আমাদের তদারকিও খুব একটা করতে হয় না।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা সড়কের জন্য ১২০ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। এরমধ্যে সড়ক নির্মাণ করেছি ৮০ ফুট। অবশিষ্ট জায়গা সড়কের দুই পাশে আছে। অনেকেই আশপাশে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আমরা পর্যায়ক্রমে এসব দখলদারদের উচ্ছেদ করে ফেলব। তিনি বলেন, বাইপাসটি চালু হলে সেটি হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। ফলে এই সড়কের দু’পাশের সরকারি জমির উপর দখলদারদের দৃষ্টি পড়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট