চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কবে হবে শান্তির জনপদ?

শিল্পাঞ্চল ও ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশি, সমর্থন না পেলে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা। ওয়ার্ড নং- ০২ প্রধান সমস্যাঃ সন্ত্রাস ও জলাবদ্ধতা আয়তন : ১৩.৫৩ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা : ১ লাখ ১০ হাজার ভোটার: ৯৪ হাজার ৫৩৩ জন কাল প্রকাশিত হবে

আল-আমিন সিকদার

৩০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ড। এই এলাকাটি ‘ক্রাইম জোন’ হিসেবেও পরিচিতি। ভূমিদস্যুদের পাহাড়কাটা, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, খুন, মাদক বিক্রির ঘটনা এখানের নিত্যদিনের ঘটনা। তাইতো প্রতিদিনই অপরাধ সংক্রান্ত নানান ঘটনার অভিযোগ ও মামলা জমা হয় সংশ্লিষ্ট বায়েজিদ থানায়।
এখানকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে এসে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন পুলিশ সদস্য। শুধু তাই নয়, বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজেও স্বীকার করেছেন এই এলাকায় সন্ত্রাসের দৌরত্ম্যের কথা।
ওয়ার্ডটিতে আছে জলাবদ্ধতা, রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, ড্রেন স্বল্পতা ও স্থানে স্থানে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। পাহাড়ি স্থান দখল ও মাদকের টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত খুনের ঘটনাতো আছেই।

তাই আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আশ্বাস নিয়েই ভোটারদের দুয়ারে করা নাড়ছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। সেই সাথে ওয়ার্ডের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছেন তারা। বলেছেন ওয়ার্ডকে আধুনিক পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার কথাও।

এ ওয়ার্ড থেকে এবার কাউন্সিলর পদে লড়ার আশাব্যক্ত করেছেন ৬ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগেরই মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ৫ জন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইছেন কেবল একজন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দুই প্রার্থী।
দলের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা দেয়া প্রার্থীরা হলেন মো. ইব্রাহিম ও আবুল কালাম আবু। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বাকি ৩ প্রার্থী হলেন বর্তমান কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু, সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ আহমদ চৌধুরী ও বায়েজিদ আওয়ামী বাস্তহারা লীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে লড়ার আশাব্যক্ত করেছেন জালালাবাদ ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জুনাব আলী।
এই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার পাশাপাশি জলাবদ্ধতাসহ ওয়ার্ডকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর আশ্বাসের কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে।
এদিকে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই এলাকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তা ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই এলাকায় বহিরাগত মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেশি হয়। মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন অনেককেই আঘাত করে এসব সন্ত্রাসীরা। কিছুদিন আগে আমার সাথের এক সহকর্মীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত এই এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটে। আমি এগুলো প্রতিহত করতে চেষ্টা করছি এবং সামনেও করবো।’

আর কী কী করার পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সর্বমোট ১৭৯টি সড়কের কাজ চলছে। এরমধ্যে ৮০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। বাকি ৯ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। গত ২১ জানুয়ারিও ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বরাদ্দের একটি রোড উদ্বোধন করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। চন্দন নগরের রাস্তা প্রশস্ত করেছি। এছাড়াও এখানে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক বাস স্ট্যান্ড করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একাজের ১৩০ কোটি টাকা চলে এসেছে। আমি জয় লাভ করলে এসব কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি ওয়ার্ডকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলব এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করবো। পাশাপাশি যুব সমাজের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে কাজ করবো। তাদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহের পাশাপাশি সহযোগিতাও করবো।’
এদিকে এই ওয়ার্ডে দু’বার নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ আহমদ চৌধুরী এবারও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দি¦তা করবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। নির্বাচনে জয় লাভ করলে শেরশাহ কলোনি দিঘি ও শেরশাহ হাউজিং এস্টেট মাঠ পরিকল্পিতভাবে সংস্কার করা, এলাকার সকল সড়কের মেরামত করা ও রাস্তার পাশাপাশি নতুন কালভার্ট নির্মাণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার সময়কালে পানির যে সমস্যা ছিল তার সমাধান করেছিলাম। আশা করছি এবার নির্বাচিত হলে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করবো।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. জুনাব আলী বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ থাকে এবং দল থেকে সমর্থন দেয়া হয় তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। নির্বাচনে জয়লাভ করলে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়া, চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং দুর্নীতি দমনসহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণের কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভাসমান লোকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ব্যবহার করে, তাই তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আমি নির্বাচিত হলে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিব।

পূর্বকোণকে স¦তন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ২০১০ এবং ২০১৫ সালে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মো. ইব্রাহিম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। দল মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার কথাও জানান তিনি। অন্যান্য প্রার্থীদের মতই তিনিও নির্বাচনী ইশতিহারে বলেছেন এলাকার অবহেলিতদের জন্য কাজ করা, শিক্ষা-চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ মাদক নির্মূলে কাজ করার কথা। পূর্বকোণকে তিনি আরও বলেন, আমার এলাকার রাস্তা-ঘাট বলতে গেলে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, তবে বিগত কাউন্সিলরদের মেয়াদকালে এই রোডের সংস্কার করা হয় নি। আমি নির্বাচিত হলে অবশ্যই এই বিষয়ে সর্ব প্রথম কাজ করব।
বায়েজিদ আওয়ামী বাস্তুহারা লীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন কাউন্সিলর পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। দল থেকে সমর্থন পেলেই তিনি এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। নির্বাচনী ইশতিহারে বলেছেন, শিক্ষা-চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার কথা। এছাড়াও তিনি জোড় দিয়েছেন ভূমিদস্যু ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দমনে কাজ করার বিষয়ে।
২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আবু প্রথমবারের মত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে দল থেকে যদি সমর্থন না পান তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করার বিষয়টি জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। শিক্ষা-চিকিৎসা সমস্যার সমাধান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা জানিয়েছেন তার নির্বাচনী ইশতিহারে।
তিনি আরো জানান, জালালাবাদ তুলনামূলক বড় ওয়ার্ড হওয়ায় তেমন উন্নয়ন হয় নি, তবে নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে উন্নয়ন কর্মকা-ের সুবিধার্থে ওয়ার্ডকে দু ভাগে বিভক্ত করবেন। এছাড়াও মাদক ও চাঁদাবাজি নির্মূলেও তিনি কাজ করে যাবেন।
ভোটারদের চাওয়া পাওয়া

পূর্বকোণকে ভোটার হিসেবে নিজের প্রত্যাশা জানিয়েছেন ওয়ার্ডের শেরশাহ কলোনির বাসিন্দা ও মহল্লা সর্দার মো. আমিনুল হক। কাউন্সিলদের কাছে তিনি চান জঙ্গি ও মাদকমুক্ত সমাজ, জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পানির প্রয়োজনীয় সরবরাহ। তিনি আরও বলেন, তাকেই ভোট দেবো যিনি এই কাজগুলো করবেন।
২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা মো. হাবিব চান ভিন্ন কিছু। তিনি বলেন, আমাদের শেরশাহ সরকারি কলোনি কে.জি. স্কুল থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি নেয়াসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে নেয়া হয় অতিরিক্ত ফি। যার কারণে ওই স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সর্বদা পড়তে হচ্ছে বিপাকে। এছাড়াও চিকিৎসা সমস্যার সমাধান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন চান এই ভোটার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট