চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংগ্রহ করা হচ্ছে চট্টগ্রামে কর্মরত চীনা নাগরিকদের তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ১১:২৭ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরির পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্ব-স্ব সংস্থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের আপাতত নিজ দেশে যাবার বিষয়টি তদারক করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে কেউ নিকটতম সময়ের মধ্যে চীনে গিয়েছিলেন কি-না, দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে জ্বর কিংবা অন্যান্য কোনো উপসর্গ দেখা দিয়েছে কি-না সে বিষয়ে তথ্য নিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সূত্র : সারাবাংলা

এছাড়া সার্বিকভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চট্টগ্রামের তিনটি হাসপাতালে পৃথক বিশেষায়িত ওয়ার্ড করা হচ্ছে। এছাড়া বিভাগের সকল জেলা হাসপাতালকেও পৃথক বিশেষায়িত ওয়ার্ড করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক রুটের সঙ্গে যুক্ত চট্টগ্রামের সব প্রবেশপথেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো ধরনের আতঙ্ক ছড়াক সেটা আমরা চাই না। তবে যৌক্তিক যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সেগুলো আমরা নিচ্ছি। এই মুহূর্তে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের নাগরিকরা কাজ করছেন। বিভিন্ন শিল্পকারখানায়ও চীনের নাগরিকরা আছেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্প প্রধানদের এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) ও কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে বিভিন্ন কারখানায় এক হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ চীন, তাইওয়ান ও হংকংয়ের নাগরিক। কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় ৮০০ শ্রমিক, যার মধ্যে প্রায় ৩৫০ চীনের নাগরিক। আনোয়ারা উপজেলায় চীনা ইকোনমিক জোন, মীরসরাই উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এবং কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছেন হাজারো চীনা নাগরিক।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আপাতত আমরা এখানে বসবাসরত চীনের নাগরিকদের তাদের দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার জন্য বলেছি। আপাতত কেউ যেন চীনে না যান। যদি চীন থেকে কেউ আসেন তাদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়া-আসা করেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কেউ চীন থেকে এসেছে কি-না বা চীনে গিয়েছেন কি-না সে তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে পৃথক তিনটি বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে শয্যা থাকবে। উপজেলায়ও হাসপাতালগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পৃথক ওয়ার্ড চালুর কাজ শুরু হয়েছে বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথক ওয়ার্ড চালুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একেবারে পৃথক ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হবে। এ জন্য আপাতত আমরা কেবিনে একটি করোনা ব্লক করব চিন্তা করছি।’

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি মেডিকেল টিম রাখা হচ্ছে। তারা চীন বা আশপাশের দেশ থেকে আসা যাত্রীদের যদি সর্দি, হাঁচি বা কোনো অন্য লক্ষণ থাকে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। তবে গত ২০ জানুয়ারি থেকেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জামান বলেন, ‘বিমানবন্দরে আমরা আগে থেকেই সতর্ক অবস্থায় আছি। যদিও চট্টগ্রামের সঙ্গে চীনের কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই, তবুও চীন থেকে অন্য কোনো দেশ হয়েও কেউ আসার তথ্য পেলে আমরা তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অনুরোধ করছি। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক পদক্ষেপ আছে।’

স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, স্থলবন্দরসহ যেসব প্রবেশপথ আছে সবগুলোতেই স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। দূর থেকে কিংবা সরাসরি শরীর থেকে তাপমাত্রা নেওয়া, সর্দি-কাশি, হাঁচিসহ অনান্য কোনো উপসর্গ আছে কি না সেটা দেখা হবে।’

প্রসঙ্গত, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এরই মধ্যে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এই ভাইরাসে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট