চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কক্সবাজারের ৮ থানার ওসিসহ ২৬৪ জনকে গণবদলি

একই ছিনতাইকারির পেছনে এক যুগ ধরে ছুটছে পুলিশ

নাজিম মুহাম্মদ

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

গত ২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটায় রিকশায় চেপে বাসায় যাচ্ছিলেন এক মহিলা। রিকশা নগরীর এম এম আলী রোডের নার্সারি মোড়ের সামনে পৌঁছাতে পেছন দিক থেকে মোটরবাইক নিয়ে আসা দুই তরুণের একজন ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দিলে মহিলা রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে যায় সড়কে। ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পালাতে গিয়ে সামনে একটি সিএনজি ট্যাক্সির সাথে লেগে মোটরসাইকেল থেকে সড়কে পড়ে যায় দুই ছিনতাইকারি। লোকজন ধরে দুই ছিনতাইকারিকে সোপর্দ করে চকবাজার থানা পুলিশের হাতে। আহত মহিলাকে পথচারীরা ভর্তি করায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পথচারীদের হাতে যে দুইজন ধরা পড়েছে তারা ছিঁচকে ছিনতাইকারি।

এক যুগেরও বেশী সময় ধরে একই ছিনতাইকারীর পেছনে ছুটছে নগর পুলিশ। মাঝে মাঝে দু’একজন ছিনতাইকারী ধরা পড়লেও দলনেতারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নগরজুড়ে ছিনতাই করছে ছিনতাইকারি গ্রুপের একাধিক সদস্য। তবে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে আট থেকে অন্তত ১৫/১৬ জন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। দলনেতাদের খুব একটা বেশী ধরা পড়তে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে ধরা পড়লেও দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে বের হয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে।

প্রতিনিয়ত ছিনতাই হচ্ছে নগরীতে। উচ্চবিত্ত নয়- মধ্যবিত্ত কিংবা নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ছিনতাইকারিরা সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। থানায় ছিনতাইয়ের মামলা নিতে তেমন আগ্রহী নয় পুলিশ। ভুক্তভোগী কেউ গেলেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে হারানোর কথা বলে সাধারণ ডায়েরি নিচ্ছে পুলিশ। এ কারণে ছিনতাইয়ের শিকার হলেও লোকজন থানায় যেতে আগ্রহী নয়। নগরীর দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারি দলের অন্যতম নেতা হলো সাত্তার ডিপজল ওরফে মোক্তার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ভুট্টো, নেজাম, দিলিপ, ফরিদ, হামকা মিলন, নজরুল, মোস্তফা, শাহাজাহান, আল আমিন, সেলিম ওরফে টানা সেলিম, হাশেম, আল আামিন ও নুরুল আলম। এদের মধ্যে ভুট্টো, ইউসুফ ও ফরিদ কারাগারে রয়েছে। এক যুগেরও বেশী সময় ধরে তারা নগরীতে ছিনতাইকারি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

নড়াইল উপজেলার উজ্জ্বল শেখ ওরফে হাতকাটা জাহাঙ্গীর। টানা তেরো বছর ধরে ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। নগরীর হালিশহর, পাহাড়তলী, বায়েজিদ বোস্তামী, কোতোয়ালী, বন্দর থানা ছাড়া জেলার হাটহাজারী থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে পনেরোটির অধিক। সর্বশেষ যশোর থেকে পিস্তল নিয়ে চট্টগ্রামে আসার পথে নড়াইলে ধরা পড়ে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারি জাহাঙ্গীর। কয়েকমাস কারাভোগ করার পর জামিনে বের হয়ে ফের নগরীতে ছিনতাইকারি গ্রুপের নেতৃত্বে দিচ্ছে। তার গ্রুপের ছিনতাইকারিরা প্রতিদিন নগরর কোথাও না কোথাও ছিনতাই করছে। জাহাঙ্গীর পেশাদার সন্ত্রাসী। হামকা নুরে আলমের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ তার। শুরুর দিকে বায়েজিদ এলাকায় নুরে আলমের সাথে থাকতো। ২০০২ সালে আগ্রাবাদ এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণে হাতের অর্ধেক অংশ কেটে যায় জাহাঙ্গীরের।
একইভাবে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ছিনতাইকারী আরেকটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে নুরুল আলম ওরফে হামকা নুর আলম। বি.বাড়িয়ার নবীনগরে আলমের বাড়ি। কখনো শেরশাহ আবার কখনো উত্তর পতেঙ্গা কাঠগড় এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তার বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী, বায়েজিদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিংসহ বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে।

হামকা মিলন ২০০৩ সাল থেকে ছিনতাই শুরু করে। ১৪ বছরে আটবার জেল খেটেছে। শুরুতে ছিনতাই করলেও পরবর্তীতে ডাকাতির সাথে জড়িত হয়। ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে পায়ে রড লাগিয়ে চলাফেরা করেছে টানা চার বছর। আহত অবস্থায়ও অপরাধ থেকে সরে দাঁড়ায়নি। এরমধ্যে ২০১৬ সালে দশ বছর সাজাও হয়েছে তার। সাজা পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থাকে মিলন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৯ জুন ডবলমুরিং থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জামিনে বের হয়ে ফের হয়ে আত্মগোপন করে।
কারাগার কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুক না কেন প্রতিমাসে ঠিকই লাখ লাখ টাকা আয় করে তারা। কোর্ট হাজতে পুলিশের সাথে তাদের রয়েছে সখ্য। কারাগারে হাজিরা দিতে এলে পুলিশের সহযোগিতায় মুঠোফোনে গ্রুপের ছিনাতাইকারির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে।

সাত বছরের ছিনতাই পেশায় অন্তত দশবার কারাগারে গেছে পেশাদার ছিনতাইকারি আবুল হাশেম। কখনো তিনমাস আবার কখনো আট থেকে দশমাস কারাভোগ করেছে। তবে জামিনে বের হয়ে আবারো ফিরেছে ছিনতাইয়ের পেশায়। এ কয়বছরে ছিনতাইকারি হাশেমের ঝুলিতে মামলার সংখ্যা জমা হয়েছে ১৫টি। বিয়ে করেছে দুটি। ছিনতাই করা মোবাইল ব্যবহার করায় দ্বিতীয় স্ত্রীকেও জেলে যেতে হয়েছে। হাতকাটা জাহাঙ্গীর, নুরুল আলম কিংবা হাশেম নয়, তাদের মতো আরো অন্তত বারো জনের অধিক দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারি গ্রুপের দল নেতা রয়েছে যাদের পিছনে বছরের পর বছর পুলিশ ছুটছে। এসব ছিনতাইকারি একাধিকবার কারাগারে গেলেও জামিনে বের হয়ে ফের ছিনতাই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট