চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চসিকে প্রশাসক নিয়োগ

মাথাব্যথা নেই আ. লীগের বিএনপি চায় নিরপেক্ষতা

ইফতেখারুল ইসলাম

১৮ জুলাই, ২০২০ | ৩:৪৯ অপরাহ্ণ

আগামি ৫ আগস্ট শেষ হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের(চসিক) বর্তমান নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। প্রশাসক হিসেবে কাকে বসানো হচ্ছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে বর্তমান মেয়র এবং স্থগিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলছেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি যাকে নিয়োগ দেবেন, তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। অপরদিকে, বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী বলছেন, দলের বাইরে থেকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ এসেছে সরকারের কাছে। দল বিবেচনা না করে একজন ইয়ং, এনার্জেটিক এবং দুরদর্শী ব্যক্তিকেই প্রশাসক নিয়োগ দেয়া উচিত।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরবাসী আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আগামী ৫ আগস্ট আমার নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। আমি কোন অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছিলাম আর এখন কি পরিবর্তন ঘটিয়েছি তা নগরবাসী জানেন। যেহেতু করোনা ভাইরাসের কারণে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারছে না সেহেতু প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি এসেছে। কাকে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। তবে এইটুকু বলতে পারি, আমি আমার মেয়াদকালে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।

নগর বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, আমি তো করোনাকালে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। যতদিন করোনাকাল শেষ না হবে। কিংবা পরিস্থিতি ভাল না হবে ততদিন আমি নির্বাচন চাই না। কারণ আমার কাছে নির্বাচনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বড়। মানুষ না বাঁচলে আমি কার প্রতিনিধিত্ব করবো। যাকে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে তিনিই সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করবেন। আমি আশা করবো একজন যোগ্য ব্যক্তিকেই এই দায়িত্ব দেয়া হবে। দল থেকে দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। দলের বাইরে থেকেও দেয়ার সুযোগ আছে। এই দায়িত্ব পালনের জন্য দরকার ইয়ং, এনার্জেটিক এবং দুরদর্শীসম্পন্ন ব্যক্তি। যিনি সিদ্ধান্তগ্রহণের পাশাপাশি শহরের আনাচে-কানাচে গিয়ে কাজ তদারক করতে পারবেন। চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এখানে আছে জলাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জ। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখেই প্রশাসক নিয়োগ দেয়া উচিত। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন অনেক খারাপ উল্লেখ করে বলেন, তাদের উপকমিটির সদস্যও মহাপ্রতারক। এখন সেই খারাপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা উচিত তাদের। তারা দলের বাইরে থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে ওই চেয়ারে বসিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রশাসক কাকে নিয়োগ করা হবে, তা নিয়ে তিনি ভাবছেন না। তিনি আপাতত জনগণ নিয়েই ভাবছেন। এই মহামারি থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটবে তা নিয়েই ভাবছেন। তবে নির্বাচনের জন্য তার প্রস্তুতি আছে। তার দল আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি আছে। যেহেতু মহামারি চলছে তাই তিনি এখন নির্বাচন চান না। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। আতঙ্ক কমছে। মানুষের মনোবল বাড়ছে। মানুষ অনেকটা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। যখন পরিস্থিতি ভাল হবে নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাচন দেবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিল ইসি। সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) এক্ট-২০০৯ এর ২৫ নং অনুচ্ছেদে নির্দেশনা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা যাবে। সরকার প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলে বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসক এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ (যদি থাকে) যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে। অবশ্য ২০১১ সালে আইনটির একই অনুচ্ছেদের একটি ধারা সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়া যাবে।’ অর্থাৎ সংশোধন করে সরকারি কর্মকর্তার বাইরে যে কোন ব্যক্তিকেও প্রশাসক নিয়োগ করা যাবে। তবে নিযুক্ত প্রশাসক কোনভাবেই একের অধিক বার বা ১৮০ দিনের অধিক সময়কাল দায়িত্বে থাকতে পারবে না বলে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) এক্ট-২০০৯ এ উল্লেখ আছে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট