চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটারের দায়িত্ব

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম

২৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৯:২২ অপরাহ্ণ

জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বা নেতা নির্বাচিত হন। ইসলামে ভোটারের দায়িত্ব অনেক। প্রত্যেকটি ভোট চারটি অর্থ বহন করে ১. ওকালাহ বা প্রতিনিধি নিয়োগ করা। ২. শাহাদাহ বা সাক্ষ্য দেয়া। ৩. শাফায়াহ বা সুপারিশ করা। ৪. আদাউল আমানাহ বা আমানত প্রাপকের কাছে অর্পণ করা। নিম্নে এ চারটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

সাক্ষ্য দেয়া

কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, ওই প্রার্থী তার দৃষ্টিতে সৎ ও যোগ্য। দেশ ও জাতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তিনিই সর্বাধিক উপযুক্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্য দানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ কর না; সুবিচার কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আল্লাহর জন্য ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান কর। তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩৫)
সুতরাং সর্বাবস্থায় ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে এবং সত্য সাক্ষ্য ও সত্য কথা বলতে হবে। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে কোনোরূপ সম্পর্ক বা অন্য কোনো কারণে অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মিথ্যা সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। টাকার বিনিময়ে কোনো অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিলে একসঙ্গে দুটি গুনাহ হবে, একটি হচ্ছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার, অন্যটি ঘুষ গ্রহণের।

সুপারিশ করা

ভোট দেওয়ার অর্থ হচ্ছে প্রার্থীর জন্য এই মর্মে সুপারিশ করা যে, দেশ ও জাতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তিনিই সর্বাধিক যোগ্য। বৈধ কাজের জন্য সুপারিশ করলে সুপারিশকারী সওয়াব পাবে এবং অবৈধ কাজের জন্য সুপারিশ করলে গুনাহ হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ কাজের জন্য সুপারিশ করবে তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে সে তার পাপের বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুত আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৫)। সুতরাং যে ব্যক্তি অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিল, সে যেন অবৈধ কাজের জন্য সুপারিশ করল। ফলে ভোটদাতাকেও প্রার্থীর অন্যায়-অপরাধের পাপের বোঝা বহন করতে হবে।

প্রতিনিধি নিয়োগ

ভোট দেয়ার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোটারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের প্রস্তাব করা। ইসলামের কথা হলো সৎ ও আমানতদার ব্যক্তিকে উকিল বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কাউকে প্রতিনিধি বানালে তার লাভ-ক্ষতি শুধু নিজের ওপরই বর্তায়। কিন্তু জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ তাকে জনগণের প্রতিনিধি নিযুক্ত করা যার লাভ-ক্ষতি পুরো সমাজ বা জাতিকেই ভোগ করতে হয়।
প্রার্থী বিজয়ী হয়ে যদি অপরাধ-দুর্নীতিতে জড়ায়, তাহলে তার পাপের বোঝার একটি অংশ ভোটদাতাকেও বহন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের পক্ষ থেকে কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল নিযুক্ত হয়, তারপর সে তাদের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কর্মকর্তা নিযুক্ত করে, অথচ সে জানে যে, মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে, যে তার চেয়েও অধিক যোগ্য এবং কোরআন-হাদিসের অধিক জ্ঞান রাখে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসুল এবং মুসলিম জাতির আমানতের খেয়ানত করল।’ (আল মুজামুল কাবির লিত-তিবরানি)

আমানত প্রাপকের কাছে অর্পণ

প্রতিনিধি নিয়োগের অধিকার আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে আমানতস্বরূপ। আমানতের জিনিস তার প্রকৃত পাওনাদারের কাছে হস্তান্তর করে দিতে হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নির্দেশ দেন, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৮)। আমানতকৃত বস্তু তার যথার্থ প্রাপকের কাছে না পৌঁছানো খেয়ানত, আর এটা হারাম ও মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের একটি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার মধ্যে ঈমান নেই…।’ (বায়হাকি)
সুতরাং নির্বাচনে ভোট দেয়া একজন ভোটারের পবিত্র আমানত। যাকে-তাকে ভোট দেওয়া ইসলাম সম্মত নয়। তাই চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। ভোট পাওয়ার যোগ্য ওই ব্যক্তিই হবে, যার দ্বারা দেশের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ হবে। সমাজে শান্তি-সুখের হাওয়া বইবে। ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণ সাধিত হবে ইত্যাদি। আর যথাস্থানে ভোট না দিলে পরকালে এ ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। তাই যোগ্য, আল্লাহভীরু, দেশপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ভোটারের নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট