চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইসলামের দৃষ্টিতে সভা-মাহফিলে মাইক ব্যবহার

অনলাইন ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০২০ | ১০:৪৩ অপরাহ্ণ

প্রশ্ন : ওয়াজ-মাহফিলের শব্দব্যবস্থা কেবল মাহফিলস্থল পর্যন্ত সীমিত রাখা যায়? উচ্চশব্দের কারণে রোগীর, পরীক্ষার্থীর কিংবা অমুসলিমদের অসুবিধা হতে পারে। এই ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

উত্তর : যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সভা, বিনোদন-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রচারণা ও ধর্মীয় ওয়াজ-আলোচনার শব্দ মূল অনুষ্ঠানস্থলে সীমাবদ্ধ রাখাই যৌক্তিক। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে মাইক লাগিয়ে অন্যদের শুনতে বাধ্য করা অন্যায়, অনৈতিক ও অযৌক্তিক। কারণ এতে আপামর জনগণ কষ্ট পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

সভা, অনুষ্ঠান ও মাহফিলের আশপাশে ব্যবহার : সভাস্থলে প্রয়োজনীয় মাইক ব্যবহার কাম্য। অপ্রয়োজনীয় মাইক ব্যবহারে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। প্যান্ডেলের বাইরে মাইক ব্যবহার করলেও বড়জোর রাত ১০টা পর্যন্ত চালু থাকতে পারে। এর বেশি কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ, গভীর রাত পর্যন্ত বাইরের মাইক ব্যবহারের কারণে অন্য ধর্মের অনুসারী, ঘুমন্ত মানুষ, শিশু, অসুস্থ লোক এবং বিশেষ করে বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়। এমনকি মাহফিলের আশপাশের মানুষের জরুরি প্রয়োজনে মোবাইলে কথাবার্তা বলাও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে পারে। কারও ক্ষতি করে, কাউকে কষ্ট দিয়ে এভাবে ইসলাম প্রচার কোনোভাবেই ইসলামে অনুমোদিত নয়।

অপ্রয়োজনীয় মাইক ব্যবহারে শরিয়তবিরোধী অনেক কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়, যেমন- নামাজির নামাজে ও ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমে ব্যাঘাত হয়, অসুস্থ ব্যক্তির কষ্ট হয়। বিভিন্ন বৈধ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের কাজে ও মনোযোগে ব্যাঘাত তৈরি ইত্যাদি। মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত হয়, এমন জোরে কোরআন তিলাওয়াতকেও ইসলামি আইনজ্ঞরা অবৈধ বলেছেন। (ফাতহুল কদির ১/২৯৮, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ৩/৫৫২, জিক্র ও ফিকির, পৃষ্ঠা ২৬)

উমর (রা.)-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি মসজিদে নববিতে এসে প্রতিদিন বিকট আওয়াজে ওয়াজ শুরু করে, এতে পাশেই কামরায় অবস্থানরত আয়েশা (রা.)-এর কাজে ব্যাঘাত হতো, তাই তিনি উমর (রা.)-কে বিষয়টি অবহিত করেন। তখন ওমর (রা.) ওই লোককে নিষেধ করে দেন। লোকটি কিছুদিন পর আবার ওয়াজ শুরু করলে ওমর (রা.) এসে তাকে শাস্তি দেন। (আখবারু মাদিনা : ১/১৫)

কাউকে কষ্ট দিয়ে কিরাত পড়তে রাসুল (সা.)-এর নিষেধ : রাসুল (সা.) মসজিদে ইতিকাফকালে সাহাবিদের উচ্চস্বরে কিরাত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেন, ‘জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রবের সঙ্গে চুপিসারে আলাপে আছো। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে কিরাতে বা নামাজে আওয়াজ উঁচু করো না।’ (আবু দাউদ, নামাজ অধ্যায়, হাদিস : ১৩৩২)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তুমি প্রতি জুমায় লোকদের হাদিস শোনাবে। যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও, তবে সপ্তাহে দুবার শোনাবে। আরও অধিক শোনাতে চাইলে তবে তিনবার। আরও অধিক নসিহত করে এই কোরআনের প্রতি মানুষের মনে বিরক্তি তৈরি করো না। লোকরা তাদের কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের নির্দেশ দেবে, আমি যেন এমন অবস্থায় তোমাকে না পাই। কারণ এতে তাদের কথায় বি সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্ত হবে। বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে। যদি তারা আগ্রহ নিয়ে তোমাকে উপদেশ দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের উপদেশ দেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৩৭)

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট