চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পবিত্র আশুরার ফজিলতপূর্ণ রোজা

পুণ্যময় হোক বছরের প্রথম প্রহর

আজম রাশেদ

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১০:১২ অপরাহ্ণ

দিন যায়, রাত নামে। রাত পেরিয়ে দিন আসে। ঘড়ির কাঁটা অবিরত ঘুরতে থাকে। বিরামহীন বইতে থাকে সময়ের স্রোত ও কালের গতিপ্রবাহ। সে ধারাবাহিকতায় একটি বছর শেষ হয়ে নতুন আরেকটি বছরের সূচনা হতে চলেছে।

মানুষের পার্থিব জীবনের তুলনা চলে বিরতি ও ফিরতিহীন ধাবমান রেলগাড়ির সঙ্গে। যার যাত্রাকাল ও যাত্রাস্থান জানা থাকলেও শেষ গন্তব্য ও যাত্রার সমাপ্তিকাল একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

মহাকালের মিছিলে অবিরাম যোগ দেয় টুকরো টুকরো ক্ষণ-মুহূর্ত, দিন-রাত, সপ্তাহ, মাস ও বছর। এভাবে মানুষ একদিন পৌঁছে যায় অমোঘ-অনিবার্য মৃত্যুর দোরগোড়ায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিন্তু তিনি তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলম্ব করান। অতএব, যখন তাদের মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় আসে, তখন সামান্য কালক্ষেপণও করে না আবার ত্বরান্বিতও করে না। ’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৬১)

তাই বছরের আগমন ও প্রস্থানে প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তির কর্তব্য হলো আত্মসমালোচনা করা। অনুতাপ ও অনুশোচনার মাধ্যমে অতীতের কাজকর্ম পর্যালোচনা করা। বিগত বছর যতটুকু সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি মতো চলার তাওফিক হয়েছে, তার শোকর আদায় করা। আর যে সময়টুকু গুনাহ, গাফিলতি ও আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে কেটেছে, সেগুলোর জন্য অনুতপ্ত হওয়া। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

এ কাজটি মুমিনের প্রাত্যহিক ও আবশ্যিক কর্তব্য। তবু ভালো-মন্দের হিসাব, ভবিষ্যতের জন্য নতুনভাবে সংকল্পবদ্ধ হওয়া পরিশুদ্ধ জীবন বিনির্মাণের অপরিহার্য শর্ত। প্রতিটি রাত-দিন, সপ্তাহ, মাস এবং বছরের আগমন ও প্রস্থান আমাদের সে শিক্ষা দেয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি দিন ও রাতকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন। এসব বিষয় শুধু তার উপকারে আসে, যে উপদেশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬২)

বছরের বিদায় ও স্বাগত জানানোর সন্ধিক্ষণে প্রতিটি ব্যক্তির অনুভূতি হওয়া উচিত, ‘যে দিনগুলো আমার শেষ হয়ে গেল, তা আমার জীবনেরই একটি মূল্যবান অংশ। একটি বছর শেষ হওয়ার সরল ও সহজ অর্থ হলো, আমার জীবনমাল্য থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পুষ্প ঝরে পড়েছে। আমার জীবন আরও সংকুচিত হয়ে এসেছে। মৃত্যু আমার আরও কাছে চলে এসেছে। আনন্দ ও উল্লাসে ফেটে পড়ার মতো কিছু নেই। বরং হিসাব-নিকাশ করে জীবনের হালখাতা করা উচিত।’

মুমিনের প্রতিটি দিন-রাত খুশি ও আনন্দের। বছরের প্রতি মুহূর্ত তার জন্য মূল্যবান। বিশেষ করে ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ বা বছরের শেষ রাত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এ রাতে অনুশোচনা (বিগত বছরের পর্যালোচনা) ও আত্মসমালোচনা করে আগামী বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ, নফল নামাজ ইত্যাদি ভালো কাজের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করা উচিত।

বছর শেষে প্রকৃত মুসলমানের অনুভূতি শুধু আনন্দ-উচ্ছ্বাসের নয়; বরং এর সঙ্গে মিশে আছে রাশি রাশি বেদনার স্ফুলিঙ্গ। কাজেই বছরের বিদায়-মুহূর্তে মুমিনের এ কথা ভেবে চিন্তামগ্ন হওয়া উচিত যে, একটি বছর তো আমি সমাপ্ত করেছি কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্য আমি কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি? পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের হিসাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ০১)। মহান খলিফা ওমর (রা.) তার খুতবায় ঐতিহাসিক একটি উক্তি উপস্থাপন করে বলেন, ‘তোমার কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ (তিরমিজি: ৪/৬৩৮)  তাই নতুন বছরে পরিশুদ্ধ আমলের ও ইবাদতের নিষ্ঠাবিধৌত প্রতিশ্রুতি ও জীবনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দৃপ্ত অঙ্গীকার হওয়া উচিত।

ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবে চিন্তিত হওয়া উচিত প্রতিটি মানুষের। কিন্তু কিছু মানুষ বছরের শুরুর দিনগুলোতে বল্গাহারা হয়ে যায়। সুন্দর মুহূর্তগুলো অপ্রীতিকর কর্মে নষ্ট করে। ভুলে যায়, নববর্ষে একটি বছরের সূচনার আনন্দের সঙ্গে আরেকটি বছর হারানোর বেদনাও জড়িয়ে আছে। অথচ আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্যই প্রয়োজন ছিল তীব্র আত্মসমালোচনা ও অত্যধিক অনুশোচনার।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ অভিধায় প্রতি বছরের শেষ রাতে দেশের কিছু জায়গায় অশ্লীলতার হিড়িক পড়ে যায়। বিভিন্ন অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ বহুগুণে বেড়ে যায়। এতে থার্টিফার্স্ট নাইটের আড়ালে বছরের প্রথম প্রহর পঙ্কিল ও কদর্যপূর্ণ হয়। যে জাতি ও সমাজ বছরের প্রথম প্রহর অশ্লীলতা ও পাপাচারে কাটায়, তাদের পরবর্তী দিনগুলো সুখকর ও কল্যাণমুখর হবে কি না, তা সহজেই অনুমেয়। ইসলাম সুস্থ বিনোদনচর্চায় উৎসাহিত করে। কিন্তু অশ্লীলতা, নোংরামি ও প্রবৃত্তির অনুসরণের সঙ্গে কখনো আপোস করে না। কাজেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো, অতীতের পাপের মার্জনা চেয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ভবিষ্যৎ দিনগুলো যাতে সুন্দর-সমৃদ্ধ, পুণ্যময় হয়, সে জন্য দোয়া করা।

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট