চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

পবিত্র আশুরার ফজিলতপূর্ণ রোজা

ইসলামের দৃষ্টিতে অল্পতে তুষ্ট থাকা

মাওলানা দৌলত আলী খান

২৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫১ অপরাহ্ণ

মানুষের চিরস্থায়ী ঠিকানা দুনিয়া নয়। অস্থায়ী দুনিয়া মুমিনের জন্য প্রকৃত শান্তির নিবাস হতে পারে না! তাই আমাদের উচিত জীবন পরিচালনায় অতিরিক্ত চাহিদা না রাখা। কোনো প্রকার বিলাসিতা না করে অল্পতে তুষ্ট থাকা। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো সর্বক্ষেত্রে অল্পতুষ্টিই।

বিলাসী জীবন কাম্য নয় : সীমাতিরিক্ত বিলাসী জীবন ইসলামে কাম্য নয়। সাদাসিধে জীবনই ইসলামে উত্তম। বিলাসিতা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহ ভীতিকে দূরীভূত করে দেয়। ফলে মুমিনরা অন্যায় বা গুনাহ করতে দ্বিধা করে না। ইবাদতের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এমনকি দ্বীনবিরোধী কার্যকলাপই নিজের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। এভাবে দুনিয়ার বিলাসিতা জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নবীজি (সা.) দুনিয়ার বিলাসিতাকে সর্বদা প্রত্যাখ্যান করেই চলেছেন। আর স্বীয় উম্মতদের বিলাস জীবন পরিহার করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) যখন তাকে ইয়েমেন দেশে পাঠালেন তখন তাকে বললেন, তুমি বিলাসিতা থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা আল্লাহ তায়ালার খাঁটি বান্দাগণ বিলাসী জীবনযাপন করেন না। (আহমদ)
অল্পতে তুষ্ট থাকা উচিত : পার্থিব জীবনে সব কিছুর পরিপূর্ণতা সম্ভব হয় না। যারা দুনিয়ার জীবনে সব পেতে চায় তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায় এক সময়। তাই অল্পে তুষ্ট থাকাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এটিই হলো নবীজি (সা.) ও সাহাবাদের অনুপম আদর্শ। এ আদর্শ গ্রহণ করলে কোনো মুমিন দুনিয়ার জীবনে মানসিক দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হতে হবে না। যে ব্যক্তি অল্পতে তুষ্ট হবে তার ইবাদতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। তাই মুমিনকে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকপ্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যদিও তা অল্প হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অল্প রিজিকে পরিতৃপ্ত ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হয় আল্লাহ তায়ালা তার অল্প আমলে সন্তুষ্ট হন।’ (বায়হাকি)
হাদিসে আরও আছে, হজরত মিকদাম বিন মায়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছিÑ কোনো ব্যক্তি তার পেট অপেক্ষা মন্দ কোনো পাত্রকে ভর্তি করেনি। আদম সন্তানের জন্য এই পরিমাণ কয়েক লোকমাই যথেষ্ট, যা দ্বারা সে নিজের কোমরকে সোজা রাখতে পারে। যদি এর অধিক খাওয়া প্রয়োজন মনে করে তবে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য আরেক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং অন্য তৃতীয়াংশ
শ^াস-প্রশ^াসের জন্য খালি রাখবে। (তিরমিজি : ২৫৫৪; ইবনে মাজাহ : ৩৪৭৪)
সুফফাবাসীদের সাধারণ জীবন : আসহাবে সুফফাবাসীর জীবন ছিল খুবই সাধারণ। আসহাবে সুফফার পরিচয় হলোÑ তরুণ, অবিবাহিত ও দরিদ্র সাহাবিদের একটি দলের নাম, যারা সুফফা নামক স্থানে বসবাস করতেন, যা নবী যুগে তিনি (হজরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে নববী চত্বরের এক পাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আসহাবে সুফফা ছিলেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত। তাদের কোনো ঘরবাড়ি এবং কোনো সহায়-সম্পদ ছিল না। তাদের আর্থিক অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে, শীত নিবারণ কিংবা পুরো শরীর আবৃত করার মতো কোনো কাপড় তাদের ছিল না। এমতাবস্থায় অর্ধ আবৃত পোশাক নিয়ে তারা বাইরে আসতে লজ্জাবোধ করতেন। অন্যদিকে সুফফার চর্তুদিকে খোলা ছিল বলে অবাধে ধূলিবালি প্রবেশ করত। ফলে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ময়লা হয়ে যেত। হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি সুফফাবাসীদের মধ্য থেকে ৭০ জন লোককে দেখেছি যে, তাদের কারও কাছে একটি চাদরও ছিল না। হয়তো একটি লুঙ্গি অথবা একটি কম্বল ছিল, যা তারা নিজের ঘাড়ের সঙ্গে পেঁচিয়ে রাখত। এটা কারও অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত আবার কারও টাখনু পর্যন্ত পৌঁছত। আর তারা তা নিজেদের হাতে ধরে রাখতেনÑ গোপনাঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে। (বুখারি : ৪৪২)
তাই আসুন, দুনিয়ার জীবনে বিলাসিতা কিংবা অনেক কিছু পাওয়ার পেছনে না ছুটে আমরাও অল্পে তুষ্ট থাকি। আল্লাহ আমার জন্য যতটুকু রিজিক রেখেছেন, তাতেই নিজের কল্যাণ মনে করে আল্লাহ ইবাদতে মগ্ন থাকি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট