চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

‘যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা’

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

এস এম ফখরুল ইসলাম নোমানী

২৯ অক্টোবর, ২০২০ | ১১:২৩ অপরাহ্ণ

মহান এই রবিউল আউয়াল মাস, এই মহিমান্বিত মাসেই মানবতার মুক্তির দিশারী আমাদের প্রিয় নবী সাইয়েদুল মুরসালীন শফিউল মুজনেবীন রহমতুল্লিল আলামীন আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওবারাকা ওয়াসাল্লাম এর আগমনে সারা জাহান খুশীর আনন্দে মাতোয়ারা।

যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বোত্তম, যিনি মহত্তম আদর্শের অধিকারী, যিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠতম পথিকৃৎ, যিনি ¯্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহপাকের প্রিয়তম রসুল, পেয়ারা হাবীব, বিশ্ব সভ্যতায় যাঁর অবদান সর্বাধিক। যিনি সমগ্র বিশ্ব মানবের কল্যাণের জন্য প্রেরিত। যাঁর আগমনের অপেক্ষা করেছেন লক্ষাধিক আম্বিয়ায়ে কেরাম যুগযুগ ধরে। যিনি সাইয়্যেদুল মুরসালীন, খাতেমুন নবিয়্যীন, যাঁর দিদার লাভ না হলে ব্যাকুল হতেন ফেরেশতাদের দলপতি হযরত জিব্রাঈল (আ), যাঁর দরবারে জিব্রাঈলকে ২৩ বছরে ২৪ হাজার বার হাজির হতে হয়েছে, যিনি আল্লাহপাকের দিদার লাভ করেছেন শবে মে’রাজে।

যিনি সর্বপ্রথম মহাশূন্য পরিভ্রমণ করেছেন, সারাবিশ্বে আজ দুই শত কোটি মানুষ যাঁর অনুসারী। যাঁর আদর্শ মহান, অতুলনীয়, অদ্বিতীয়, চিরস্মরণীয়, চির অনুকরণীয়, চির সংরক্ষিত, চির প্রশংসিত, তিনিই তো সেই অনন্য অসাধারণ ‘যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা’ যাঁর সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন ঃ আমি কোনো কস্তুরী, কোনো আম্বর এবং কোনো সুগন্ধি বস্তু হযরত রসুলুল্লাহ (সা) এর চেয়ে অধিকতর খুশবুদার পাইনি। যদিও কারও সঙ্গে পেয়ারা নবী (সা) মোসাফাহা (করমর্দন) করতেন তবে সমস্ত দিন ঐ ব্যক্তির হাতে হুজুর (সা) এর মোসাফাহার খুশবু লেগেই থাকতো। আর যদি কখনও কোনো শিশুর মাতায় তিনি হাত বুলিয়ে দিতেন তবে খুশবুর কারণে ঐ শিশু হাজারো শিশুর মাঝে অত্যন্ত সহজে পরিচিত হতো।

হায়াতুন্নবী (সা) একবার হযরত আনাসের (রা) গৃহে বিশ্রাম করছিলেন। প্রিয়নবীর (সা) দেহমোবারক ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল। হযরত আনাসের মাতা হুজুর (সা) এর দেহমোবারকের ঘাম একটি শিশিরে পুরে নিচ্ছিলেন। হুজুর (সা) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন ঃ তুমি কি করছো ? তিনি জবাব দিলেন ঃ হুজুর আমরা এগুলোকে আমাদের সুগন্ধির সঙ্গে মিশ্রিত করবো। কেননা, আপনার এই ঘাম সর্বোত্তম সুগন্ধি। ইমাম বোখারী (র) হযরত যাবের (রা) এর সুত্রে ‘তারীখে কবীর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন হুজুর (সা) যদি কোনো দলের সঙ্গে কোথাও গমন করতেন, যদি কেউ তাঁর অনুসন্ধান করতো তবে সে শুধু খুশবুর কারনেই তাঁর সন্ধান লাভ করতো। তাই, তিনি সেই অপূর্ব বিশ্ময়কর ফুল- ‘যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা’।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ প্রদত্ত ওয়াহির আলোকে মানবসমাজকে ইসলামের দাওয়াত দেন। ইসলামের আলোকে আলোকিত হয়ে সাহাবিগণ পৃথিবীর শেষ্ঠ মানুষে পরিণত হন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা) এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহাবিগণ ইসলামের আলো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেন। মেসকাত শরীফে তিরমিযি শরীফের সূত্র থেকে হযরত আব্বাস (রা) এর বিরবণ সংকলিত হয়েছে যে, আখেরি জামানার শেষ নবী (সা) এরশাদ করেছেন ঃ আমি মোহাম্মদ (সা) আবদুল্লাহর পুত্র, আবদুল মোত্তালেবের পৌত্র। আল্লাহপাক সমগ্র সৃষ্টিজগতের মাঝে আমাকে সর্বোত্তম হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মানবরূপে সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন, আরব এবং আজম। আমাকে উত্তম ভাগ অর্থাৎ আরবের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন।

আর আরবের মধ্যে কয়েকটি গোত্র রয়েছে। আমাকে উত্তম গোত্র অর্থাৎ কোরাইশ গোত্রে সৃষ্টি করেছেন। আর কোরাইশদের মধ্যেও কয়েকটি বংশ সৃষ্টি করেছেন। আমাকে সর্বোত্তম বংশ বনি হাশেম বংশে সৃষ্টি করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে উত্তম আর বংশের দিকেও আমি সর্বোত্তম সুবহানাল্লাহ

হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেছেন যে, বিশ্বনবী হুজুরে পাক (সা) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একবার আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে আল্লাহপাক তার প্রতি দশটি রহমত নাজেল করেন এবং তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তার দশটি মরতবা বুলন্দ করেন। হযরত এবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন যে, মহানবী (সা) এরশাদ করেছেন ঃ কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আমার সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করবে, সে যত বেশী পরিমাণে আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করবে।

হক্কানী ওলামায়ে কেরাম হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন যে, দয়াল নবী (সা) এর পবিত্র নাম শ্রবণের পর প্রথমবার দরূদ পাঠ করা ওয়াজেব। তৎপর সেই মজলিশে যতবার তাঁর মহান নাম শ্রবণ করবে ততবার দরূদ পাঠ করা মোস্তাহাব।

কামলিওয়ালা নবী (সা) ছিলেন যেমনী বিনয়ী, তেমনি মিষ্টভাষী, অতিরাগের মুহূর্তেও তিনি কোনদিন কাউকে কটুকথা বলেননি। তার মধুময় ব্যবহারে শত্রুও মুগ্ধ হয়ে যেতো। অসতর্ক মুহূর্তেও তার মুখ থেকে কোনদিন মিথ্যা কথা বের হয়নি। সত্যবাদিতার জন্যই আরববাসীরা তাকে ‘আল-আমিন’ এবং ‘আস সাদিক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি ছিলেন ক্ষমার মূর্ত প্রতীক। তিনি আমাদের জন্য অনুকরণীয় অনুসরণীয় একমাত্র ‘উসওয়াতুন হাসানাই’- ‘সর্বোত্তম মহান আদর্শ’। তিনি ছিলেন মানবতার মুক্তির দূত। তার আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আসতে পারে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি।

আসুন, আমরা সবাই এই মহান রবিউল আউয়াল মাসকে আখেরীও বিশ্বনবী (সা.) এর আগমন উপলক্ষ্যে স্বাগত জানাই এবং আল্লাহর হাবীবের শানের উপর বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করি আল্লাহতায়ালা পেয়ারা হাবীরের মহব্বতের ফয়েজ আমাদের সকলের হৃদয়ে আসুক। আমীন।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট