চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হিজরি নববর্ষে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি

হিজরি নববর্ষে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি

আ ব ম খোরশিদ আলম খান

২১ আগস্ট, ২০২০ | ৬:৫২ অপরাহ্ণ

স্বাগত হিজরি নববর্ষ ১৪৪২। নতুন বছরে দেশ ও বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক এই আর্তি জানাই। তিনটি বর্ষপঞ্জি: খ্রিস্টিয়, বাংলা ও হিজরি বছর বিশ্বের কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বাধিক অনুসৃত হয়ে আসছে। প্রতিটি বর্ষপঞ্জির পত্তনের পেছনে রয়েছে কিছু ঘটনা ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয় আশয়। তেমনি আরব দেশের প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে ওই সময়ে সমাজ ও রাষ্ট্রপরিস্থিতির আলোকে প্রবর্তিত একটি বর্ষপঞ্জি হলো হিজরি সন। ওই সময়ে আরব দেশে তারিখ হিসেবে শুধু মাসের নাম লেখা হতো। বারো মাসে বছরÑ এই রীতি প্রচলিত থাকলেও নির্ধারিত কোনো সন বা বর্ষপঞ্জির হিসেব ছিল না।

গণকল্যাণমূলক বহুজাতিক ইসলামি রাষ্ট্রের কর্ণধার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এর খিলাফতকালে বিস্তৃত অর্ধেক পৃথিবীর শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠু ও গতিশীল করার প্রয়োজনে এবং দায়িত্বমুখী জবাবদিহি প্রশাসন গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তিত হয়। হিজরি সন প্রবর্তনের এটি একটি কারণ। তবে এর সাথে আরেকটি বড় কারণ ও লক্ষ্য করা যায় ইতিহাসের পাতায়। নতুন প্রবর্তিত বর্ষপঞ্জির নামকরণ ‘হিজরি’ কেন হয়েছে এবং ‘হিজরি’ শব্দটিই বা এলো কীভাবে তা জানতে গেলে এই কারণটি অনুধাবন করা যায়। তাই, হিজরি সনের পটভূমি, প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এর উদ্ভবের কার্যকারণ জেনে নেওয়া জরুরি।

৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরি সনের গণনা শুরু হলেও পৃথিবীতে বছর গণনার দুটো রীতি সুদূর অতীত থেকে চলে আসছে। একটি হলো সৌর রীতি, অন্যটি চান্দ্ররীতি। সূর্যের পরিক্রমের হিসেবে যে বর্ষ গণনার উদ্ভব ঘটে তা সৌরসন। চন্দ্রের পরিক্রমের হিসেবে যে বর্ষ গণনা শুরু হয় তাই চান্দ্রসন। সূর্যের নিজ কক্ষপথে এক চক্র ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় তিনশত পঁয়ষট্টি দিন পাঁচ ঘণ্টা আটচল্লিশ মিনিট ছেচল্লিশ সেকেন্ড। এই হচ্ছে সৌরবর্ষের দৈর্ঘ্য। অন্যদিকে চন্দ্রকলার হ্রাস ও বৃদ্ধি ঘটায় সময় লাগে প্রায় ঊনত্রিশ দিন বারো ঘণ্টা, যে কারণে এক চান্দ্রবছর হতে সময় লাগে প্রায় ৩শ ৫৪ দিন ৮ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট। হিজরি সন চান্দ্র বছরের সাথে সম্পৃক্ত একটি বহুল প্রচলিত সন সারাবিশ্বে কম বেশি অনুসৃত হয়ে আসছে। হিজরিসন চান্দ্রসন হওয়ায় কোনো ঋতুর সাথে এর মাসগুলো স্থির থাকতে পারে না। সকল ঋতুকে ঘিরে এই হিজরি সন আবর্তিত হয়ে থাকে। এটি হিজরি সনের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। বলাবাহুল্য, বাংলা সনের উৎস হিজরি সন থেকেই।

হিজরতের ১৭ বছর পর ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সনের প্রবর্তন হয়। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল হিজরতের ঘটনা ঘটলেও আরবের প্রচলিত মাসগুলোর ক্রম ঠিক রাখার জন্য প্রথম মাস মুহাররম থেকেই হিজরি নতুন সন গণনা নির্ধারিত হলো। ঘটনাবহুল মহররম মাস, আশুরা ও শোহাদায়ে কারবালার ট্র্যাজেডির মাস মহররম হিজরি সনের প্রথম মাস শুধু নয়, পৃথিবীর অস্তিত্ব ও বিবর্তনের বিভিন্ন ঘটনা উত্থান-পতনের সাক্ষী মহরম মাস। এই মহরমই হিজরি বর্ষের সূচনার সাথে জড়িয়ে আছে। মহানবীর (সা) মদিনায় হিজরতকে মহিমান্বিত করার প্রয়োজনে এবং মুসলমানদের স্বতন্ত্র জীবনধারা ও ইতিহাস ঐতিহ্য নির্মাণের সাথে হিজরি সন ও মহররম মাস আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।

সারাবিশ্বে আজ নিরীহ মানবতার ওপর নানা দুর্যোগ নেমে এসেছে। চলছে দুর্বলের ওপর সবলের নির্মম নিপীড়ন ও অত্যাচার। দেশে দেশে মানুষে মানুষে সংঘাত, যুদ্ধ হানাহানি থামাতে নতুন বছরে আসুন দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করি। সারাবিশ্বে চলছে করোনার আগ্রাসন তথা মহামারি। যা সর্বস্তরের মানুষকে কাবু করে ফেলেছে। বিত্তবান ও বিত্তহীন সব মানুষকে করোনার ধকল সইতে হচ্ছে। আসুন নতুন বছরে নতুন স্বপ্নে নতুন অঙ্গীকারে আমরা ঘুরে দাঁড়াই। করোনার থাবা থেকে নিষ্কৃতি পেতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ জানাই। হিজরিবর্ষের সূচনায় সবার মাঝে শুভবোধ, কল্যাণ চিন্তা ও মানবিক দায়িত্বানুভূতির চেতনা জাগ্রত হোক- এই আশাবাদ থাকলো। স্বাগত হিজরি নববর্ষ ১৪৪২।

 

 

লেখক: ইসলামী চিন্তক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট