চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

নিরাপদ ও আনন্দময় প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের করণীয়

আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

“শতভাগ শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করাও আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার। এটিকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য যা প্রয়োজন সবকিছুই করব আমরা। আমাদের শিশুরা আমাদের অমূল্য সম্পদ, আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে অঙ্গীকারাবদ্ধ” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ । আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের নিচে সকল মানব সন্তানকে শিশু হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। শিশুর জন্য চাই সুন্দর আগামী। আর তার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ ও আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ। একারণে শিশুঅধিকার সনদেও শিশুর সুরক্ষা ও অংশগ্রহণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একটি শিশুকে মানব প্রগতির অনিবার্য অংশীদার হিসাবে গড়ে তুলতে যেসব সুবিধা, নিরাপত্তা ও রক্ষা ব্যবস্থা থাকা দরকার তার সবকিছুই শিশুঅধিকার সনদে বিদ্যমান। শিশু অধিকারগুচ্ছের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘শিশুদের অংশগ্রহণের অধিকার এবং শিশুর সুরক্ষার অধিকার’। শিশুর সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা এবং সমাজে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করার প্রাথমিক শর্ত এই অধিকার। পরিবারে যে শিশুটি নির্ভয়ে নিজের কথা বলতে পারে না, সে একইভাবে বিদ্যালয় বা পরিবারের বাইরেও কথা বলতে পারে না। তাই শিশুর অংশগ্রহণের অধিকারের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে পরিবার ও বিদ্যালয়। পরিবারে বা বিদ্যালয়ে শিশুর কথা বলা, নির্ভয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত প্রদান এবং বাইরে কোনো সহায়ক শিক্ষা কার্যক্রম বিশেষ করে শিশুদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার পরিবেশ থাকতে হবে। একইভাবে সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় শিশুর স্বাধীনভাবে মতামত ও ভাবপ্রকাশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, সভা, সমাবেশের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ হওয়া এবং নিজ ভাষা ও ধর্মচর্চার স্বাধীনতা সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও শিশুদের অবাধে তথ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই বিদ্যালয়ে নিরাপদ ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুর অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।
জাতীয় উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও গতিশীল সমাজ সৃষ্টিতে দক্ষ মানব সম্পদের বিকল্প নেই। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। আর প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে যে কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষা অনেক শিশুর জন্য প্রান্তিক শিক্ষা। তাই প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশের সকল শিশুদের জন্য যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। এই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে কর্মসূচিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের মধ্যে বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়া প্রায় শতভাগ শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ভর্তিকৃত সকল শিশুদের হাতে বছরের প্রথম দিনে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হয়। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের অধিকাংশই আসে নিম্নআয়ের পরিবার থেকে। নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুরা সাধারণত অপুষ্টির শিকার হয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পরও এই সব শিশুরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে অপুষ্টির শিকার হওয়া এসব শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। পুষ্টিহীনতার কারণে তাদের মেধাশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। ফলে তারা বিভিন্ন শ্রেণিতে পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থী হিসেবে থাকে। এর ফলে একটা বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপনের আগেই ঝরে পড়ে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি শতভাগ শিক্ষিত জাতি গঠন আমাদের জন্য অনেক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী বস্তুনিষ্ঠ দিক নির্দেশনা থাকতে হবেÑ যা শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্মেষ ঘটাতে পারে আত্মপ্রত্যয়, নিয়মানুবর্তিতা, ঐতিহ্যের চেতনাবোধ, স্বাধীনতার মূল্যবোধ, আদর্শিক স্পৃহা, সৎ ও সুস্থ সাংস্কৃতিক উন্মেষ এবং বৈষয়িক বুদ্ধিবৃত্তির সাথে আত্মিক উৎসর্গ সাধনের প্রয়োগমুখিতা। দেশের জাতীয় অধ্যাপক প্রখ্যাত দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বলেছিলেনÑ ‘শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে যদি নৈতিক মানসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি করা না যায় তাহলে শিক্ষা থেকে সুফল লাভ হবে না।

শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি বিশেষের চরিত্রে যদি কাক্সিক্ষত গুণাবলী প্রবিষ্ট করা না যায় তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ প্রমাণিত হবে।” ব্যক্তি তথা প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে সত্যবাদিতা, সাধুতা, ন্যায়বোধ, নিরপেক্ষতা, শৃঙ্খলা, কর্তব্যজ্ঞান, দেশ সেবা, মানবিকতার মতো মহৎ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটাতে হলে শিক্ষার্থীর মনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সৃষ্টির উপযোগী অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। আনন্দময় ও নিরাপদ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে :
ক) অবকাঠামোগত সমস্যা : পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা, খেলার মাঠের অভাব, ল্যাব ও লাইব্রেরির না থাকা, ছাত্রাবাসের অভাব, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুপস্থিতি, পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষের অভাব, কমনরুমের অভাব, পর্যাপ্ত টয়লেট না থাকা, স্কুল মেরামতের সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিনষ্ট স্কুল দালান, নিরাপদ সড়কের অভাব ইত্যাদি।
খ) সামাজিক সুরক্ষার সমস্যা : শিক্ষক সংকট, ইভ টিজিং, বিনোদনের অভাব, শিক্ষকদের বেতন না দেওয়ার কারণে পাঠদানে অমনোযোগিতা, শিশুবান্ধব পরিবেশের অভাব, বাল্য বিবাহ, মানসম্মত শিক্ষার অভাব, স্কুলের অভাব, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বন্দ্ব, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের অভাব, অর্থনেতিক সংকট, মেয়েশিশুদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, নেতিবাচক উপায়ে স্কুল ফান্ড গঠন, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুর প্রতি সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক সমস্যা, যৌননির্যাতন ইত্যাদি।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্য হচ্ছে: “প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ ধারায় আমাদের কোমলমতী শিশুদের প্রতি আমাদের প্রাণের শুভাশিষ থাকবে ঝর্না ধারার মত, অকৃত্রিম ও উচ্ছল। তাহাদের শিক্ষার বিকাশ ও প্রসারে জীবনের সম্মুখ যাত্রার সকল অবলম্বনকে অবারিত রাখতে হবে। কোন প্রকার ভয়-ভীতি, উৎকণ্ঠা ও ঝুঁকির মধ্যে তাদের শিক্ষার সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ কোনভাবেই যেন কোন অন্তরায় সৃষ্টি না করে। সেদিকে সকলকে বিশেষ সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।”
আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশে শিশুদের বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, নান্দনিক, বুদ্ধিবৃত্তীয় ও ভাষাবৃত্তিয় তথা সার্বিক বিকাশ সাধনের উপযোগী শিক্ষাদানে সক্ষম, আধুনিক মনমানসিকতা সম্পন্ন এবং পেশাগত দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষকের দক্ষতাই প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের সবচেয়ে বড় প্রভাবক। শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে, তার শিখনকে ফলপ্রসূ এবং সর্বোপরি তাকে একজন যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।
মাত্র কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারলেই প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিবেশ আনন্দদায়ক ও চিত্তাকর্ষক হবে। যে বিদ্যালয়ে যত বেশি গান-বাজনা, খেলাধুলা, ছবি আঁকা, বনভোজন, শিক্ষা সফর, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মা সমাবেশ, স্কাউটিং, বিতর্ক প্রতিযোগিতা করা হবে, সে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ততবেশি উন্নত হবে এবং হতেই হবে; এর কোন বিকল্প নেই। কারণ একটাইÑ “শিশুরা আনন্দের মাধ্যমে শেখে”। সারাদিন শুধু পড়া লেখার বোঝা চাপিয়ে দিলে তার ফল মোটেই ভাল হবে না। তাতে বরং আরো শিক্ষার মান অবনমিত হবে।
প্রতিটি বিদ্যালয়ের একটি বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। যেখানে-শিক্ষা সফর ও বনভোজন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, স্কাউটিং-এ বিষয়গুলো বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলো থাকলেও এর তেমন প্রয়োগ হয় না। যে সকল বিদ্যালয় এ বিষয়গুলোর উপর বেশি জোর দেয়, শুধু সেই বিদ্যালয়গুলোরই মান ভাল হয়। এ ছাড়া আমরা যখন আরো বেশি আর্থিকভাবে সাবলম্বী হবো তখনÑস্কুল ফিডিং কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি, লাইব্রেরি স্থাপন, ল্যাবরেটরি স্থাপন, জীবন থেকে শিক্ষা, বাস্তব শিক্ষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য শিক্ষাসহ অনেক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে করতে পারব। যেহেতু আমরা তৃতীয় বিশ্বের দেশ, সেহেতু এ বিষয়গুলোসহ একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে কিছুটা অনীহা থাকলেও, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে খুব আনন্দ সহকারে সেটি গ্রহণ করবে এবং কাজে আনন্দ পাবে। এর ফলে প্রতিটি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা খুব আনন্দ করে, মজা করে শিক্ষালাভ করবে। তখন তারা মনেই করবে না তারা বিদ্যালয়ে আছে, মনে করবে কোন শিশু পার্কে আছে।
আমরা যদি প্রতিটি বিদ্যালয়ে সংগীত, অঙ্কন, খেলাধুলা, শিক্ষা সফর, বনভোজন, স্কাউটিং, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-এর সমন্বয়ে আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দিতে পারি এবং বিদ্যালয় এলাকার সকল জনগণ, অভিভাবক, মায়েরা, শিকক্ষ-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে মিলে আনন্দঘন শিক্ষার জন্য সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসি, তবে আমাদের শিশুরা আর বাড়িতে থাকবে না। তারা বিদ্যালয়ে আশার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবে, আর বিদ্যালয়ে আসলে বাড়ি যেতে চাইবে না। যার ফলে তাদের স্কুলভীতি দূর হবে, শিক্ষণ স্থায়ী হবে, আর শিক্ষার্থীরা মোটেই ঝরে পড়বে না, এবং দিনে দিনে আমাদের কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জিত হবে। শিক্ষার্থীরা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
আনন্দময় ও শিশুবান্ধব শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন শেখানো কাজের মান উন্নয়ন করা। এক্ষেত্রে শিক্ষকরাই মূল ভূমিকা পালন করেন। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন। দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাংলা, গণিত, ইংরেজি, পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান এই পাঁচটি বিষয়ে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ এর পর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন কাজের মান উন্নয়নে সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ শিক্ষকদের গতানুগতিক পাঠদান পদ্ধতিতে পাঠদান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারা। তাদেরকে শিক্ষাক্ষেত্রে যুগোপযোগী ও আধুনিক ধ্যান-ধারণার প্রতি নিজের তাগিদেই দৃষ্টি দিতে হবে। নিজের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের প্রথম শর্ত হচ্ছে কাজের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেকড় ছিলো প-িতমশাইদের পাঠশালা। তারা তাদের আর্থিক দৈন্যের মাঝেও কখনো শিক্ষকতা পেশার প্রতি আস্থা হারাননি। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানকারী শিক্ষকরা যদি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে শিক্ষকতার পেশাকে ভালোবেসে ছোট শিশুদের শিক্ষাদানে এগিয়ে আসেন তবে প্রাথমিক শিক্ষা এগিয়ে যাবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা ভর্তি হয় ৫/৬ বছর বয়সে। তারা আসে মায়ের সান্নিধ্য থেকে। তাদেরকে বিদ্যালয়ের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষককে মায়ের মতো মমতা দিয়ে, বন্ধুর মতো ভালোবাসা দিয়ে বিদ্যালয়ে আপন করে নিতে হবে। কোনো শিশু কোনো পরিবেশে এসে প্রথমে যদি ভালোবাসার ছোঁয়া পায় তাহলে তার পক্ষে সে পরিবেশে মানিয়ে নেয়া সহজ হয়। তার মনে বিদ্যালয়ভীতি থাকবে না এবং তার ফলে সে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়বে না। বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তি করার দিনে নবাগত শিক্ষার্থীকে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়, বিদ্যালয়ে যদি সাজানো থাকে শিশুর খেলার বিভিন্ন উপকরণ, শিশু যদি বুঝতে পারে তার জন্যই এই আয়োজন তাহলে শিশু বিদ্যালয়কে তার নিজের বাড়ির মতোই ভাবতে পারবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে এই শিশুদের সাথে নিজের সন্তানের মতোই আচরণ করতে হবে। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, শৌচাগার ও পানীয় জলের সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে শিশুর বয়স ও রুচির প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার। বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে শিক্ষার প্রথম সোপান। এ শিক্ষা একদিকে শিশুকে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা দান করে, অন্যদিকে শিশুকে তার অর্জিত শিক্ষার মাধ্যমে পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে। এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের প্রধান শর্ত হলো বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশু ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিশুদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সর্বোপরি শ্রেণিকক্ষে আন্তরিক ও মানসম্মত পাঠদান। শিশুদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা ও মানসম্মত পাঠদানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণ প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের অধিকতর অংশগ্রহণমূলক এবং তাদের কাছে পাঠদানকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। খুব সহজেই অল্প ব্যয়ে অনেক আকর্ষণীয় উপকরণ তৈরি করা যায়।
প্রতিটি স্বাভাবিক শিশুই সৃজনশীল। সৃজনশীলতা হলো নিজের মতো করে কিছু করা, সবার চেয়ে আলাদা কিছু করা। কাজেই নতুন কোনো কিছু তৈরি করা, যা ভালো কাজে লাগতে পারে বা কোনো কাজ নতুনভাবে করা সৃজনশীলতা হিসেবে পরিগণিত হয়। শিশুদের ভেতরে সৃজনশীলতা লুকানো অবস্থায় থাকে। বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকগুলোর বিষয়বস্তু নির্বাচন ও উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শিশুর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ সাধনের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সচরাচর আমরা দেখি কোনো শিশু ছবি আঁকতে পছন্দ করে, কোনো শিশু গান শুনতে বা গাইতে পছন্দ করে, কোনো শিশু নৃত্য দেখলে মনোযোগী হয়, কোনো শিশু লিখতে পছন্দ করে, কোনো শিশু গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে, কোনো শিশু সকল বিষয়ে প্রশ্ন করতে চায়, আরো জানতে চায়, কোনো শিশু দলে কাজ করার সময় নেতৃত্ব দিতে পারে। এই যে শিশুদের কাজ করার মধ্যে এত বৈচিত্র্যÑ এই বৈচিত্র্যকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর, সঠিকভাবে বিকশিত করার দায়িত্ব শিক্ষকের। শিক্ষককে খুঁজে বের করতে হবে কোন শিশু কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়? কীভাবে তার মনের কথাগুলো ব্যক্ত করতে চায়? আর এজন্য শিক্ষকের সৃজনশীলতা বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তাকে কৌশলী হতে হবে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য। শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। শিশুর মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। ছোটখাটো ঘটনায় শিশুর আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করতে পারলে সে অন্যকে সম্মান করবে, কাউকে কষ্ট দেবে না, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে না, মারামারি করবে না, মিথ্যা কথা বলাসহ যে কোনো অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। অর্থাৎ শিশুটি একজন উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। শিশুর সুকুমার বৃত্তির বিকাশের ক্ষেত্রে শিশুদের চিন্তা, চেতনা ও মেধার উপর ভিত্তি করে তাদেরকে সেই রকম করে গড়ে তুলতে হবে। শিশু এ কাজে অভ্যস্ত হলে শিশু তার নিজের মনোভাব সুন্দরভাবে ব্যক্ত করতে পারবে এবং লিখে প্রকাশ করতে পারবে। শিশু আত্মপ্রকাশের শক্তি অর্জন করবে। শিশু আত্মপ্রত্যয়ী হবে এবং তার নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটবে। শিশু মুক্তচিন্তা ও মুক্তমনের অধিকারী হবে। বিষয়বস্তু মুখস্থ করার একঘেয়েমি দূর হবে এবং শিশু মানসিক জড়তা থেকে মুক্তি পাবে।
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যার আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিটি শিশুকে তার ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। প্রতিটি শিশুই অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুদের এই সুপ্ত সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন সৃষ্টিধর্মী নির্দেশনা ও সহযোগিতা। শিশুর বিদ্যালয় পরিবেশ যত সুন্দর হবে শিশু শিক্ষা গ্রহণের প্রতি তত আগ্রহী হবে। শিশুরা যতক্ষণ শ্রেণিতে থাকে ততক্ষণ ভালো চিন্তা ও কাজে ব্যস্ত থাকে। বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার গঠনের মাধ্যমে শিশুরা সহজেই তাদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে পারবে। শিশুরা তাদের বুদ্ধিমত্তা অনুসারে তার পছন্দের জায়গায় বসে সৃজনশীল কাজে মেতে উঠবে। এতে সে সুন্দর ও সৃষ্টিধর্মী অভ্যাসের অনুশীলনের মাধ্যমে একজন আলোকিত মানুষে পরিণত হবে। শিশুরা সবসময় কিছু করতে চায়। বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি থাকলে তারা তাদের অবসর সময়ে তাদের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে যেমন বই পড়া, লেখা, ছবি আঁকা, বিভিন্ন নকশা আঁকা ও কাটা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে মেতে উঠলে বিদ্যালয়ের পরিবেশ যেমন শান্ত ও প্রাণবন্ত থাকবে তেমনি শিক্ষকদের জন্যও সহায়ক একটি পরিবেশের সৃষ্টি হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য: “একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা।”
বঙ্গবন্ধু ১০ জানুযারি ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন শিক্ষাকে বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষাকে। ২৬ জুলাই ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় দেশের ১ম শিক্ষা কমিশন “কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন”। ১৯৭৪ সালে প্রবর্তন করা হয় শিশু আইন। দেশে প্রাথমিক শিক্ষা আইন জারি করেন ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৩ সালে ৩৬১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করেন। সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন। এর উল্লেখযোগ্য ভিশন-
* প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তির হার ১০০ শতাংশে উন্নীতকরণ। বর্তমানে তা শতভাগ উন্নীত হয়েছে;
* ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে তা শতভাগ এ উন্নীত হয়েছে।
জাতীয় শিশুনীতি (২০১০) বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধ পরিকর। শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুশীলন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ এবং ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকল শিক্ষর্থীকে সমভাবে মৌলিক চেতনা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং জাতির জন্য সম-নাগরিকভিত্তি সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক পরিম-লে স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই সরকার প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষানীতি। নারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে “শিক্ষিত মা এক সুরভিত ফুল, প্রতিটি ঘর হবে এক একটি স্কুল’Ñএই শ্লোগানকে সামনে রেখে মা সমাবেশ করছে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের হার কমানোসহ শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশকে আকর্ষণীয় ও শিশু বান্ধব করার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, অতিরিক্ত শ্রেণি কক্ষ নির্মাণ, নিড বেইজড মেরামত, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ, ওয়াশব্লক তৈরি, নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে। শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের জন্য সরকার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিন্ন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে পাঠ্যবই সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া সরবরাহ, কম্পিউটার সরবরাহ, ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল পিয়ানো সরবরাহ, মেটালিক বোর্ড সরবরাহ, ডুগি, তবলা, হারমোনিয়াম প্রদান এবং পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চার্ট প্রদান করা হয়। ২০১০ সন থেকে দেশের ৬০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থীও অংশগহণে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রবর্তন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সন থেকে ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্ট চালু করা হয়েছে। সাথে সাথে শিশুদের নান্দনিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে নিয়মিত ভিত্তিতে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রাপ্ত ৫০ হাজার নন-রিফ্লেকটিভ মেটালিক বোর্ড এবং ৫ হাজার ডিজিটাল পিয়ানো বিদ্যালয় পর্যায়ে সরবরাহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

লেখক * মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন), বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট