চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আইসিটি ভীতি কাটাতে হবে শিক্ষার্থীদের

কাজী জামাল উদ্দীন

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) একটি আবশ্যিক বিষয়। প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের পর দেখা যায় প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী কেবল আইসিটি বিষয়ে ‘এফ’ গ্রেড বা কম নম্বর পাচ্ছে। এজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আইসিটি বিষয় নিয়ে একটা ভীতি কাজ করে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ হতে একাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ে ওঠার পিছনে এই বিষয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে সর্বমোট ৬টি অধ্যায় রয়েছে। ২০১৫ সালে এই বিষয়ে সর্বপ্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এই বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১০০ নম্বরের বিষয়টিতে ২৫ ব্যবহারিক, ২৫ বহুনির্বাচনী এবং ৫০ নম্বর সৃজনশীল অংশ রয়েছে। প্রতিটি অংশে আলাদাভাবে উত্তীর্ণ হতে হয়।
বিষয়টি নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীর ভয়-ভীতি রয়েছে। বিশেষ করে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে এই বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন বিষয় বলে মনে হয়। এর পিছনে যথেষ্ট কারণও আছে। আজ সেই ভয়ভীতি দূর করার জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু পরামর্শ দিতে চাই। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে হবে যে, সে কি ১০০ নম্বরের উত্তর করবে, নাকি ভাল একটা নম্বর পাবে? ৬টি অধ্যায়ের এই বিষয়টিতে সৃজনশীল অংশে ৮টি প্রশ্ন হতে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ অধ্যায় হলো তত্ত্বীয় এবং এই তিনটি অধ্যায় হতে একটি করে মোট ৩টি কখনও কখনও ৪টি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয়। যেহেতু মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা মুখস্থ বিদ্যায় বেশি অভ্যস্থ তারা কেবল এই তিনটি অধ্যায় ভাল করে চর্চা করলেও (সৃজনশীলঅংশে) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।
এবার আসা যাক বহু নির্বাচনী অংশে। ২৫ নম্বরের মধ্যে ৮ নম্বর পেতে হবে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ অধ্যায় ভাল করে চর্চা করলে ১২-১৩ নম্বরের উত্তর করা যায় বহু নির্বাচনী অংশে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এবার আসা যাক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায়শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা। তাদের সবাই চায় আইসিটিতে ৮০ হতে ৯০ এর বেশি নম্বর। তাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ রয়েছে। বেশি নম্বরের জন্য তারা সেই পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা গণিতে পারদর্শী। তারা যদি তৃতীয় অধ্যায় ভালভাবে চর্চা করে তবে এই অধ্যায় হতে ২টি প্রশ্নের উত্তর করতে পারবে। তৃতীয় অধ্যায়ের রূপান্তর এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ের পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগফল নির্ণয় করতে জানলে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। এছাড়া, লজিক সার্কিট বাস্তবায়ন, অ্যাডারও ডিকোডার/এনকোডার বুঝতে পারলে আরেকটি প্রশ্নের উত্তর করতে পারবে। এবার আসা যাক সবচেয়ে কঠিন যে অধ্যায়টি অর্থাৎ পঞ্চম অধ্যায় (সি প্রোগ্রাম) এরকথা। এই অধ্যায় হতে সিরিজের প্রোগ্রাম (ধারা), ক্যালকুলেশনের প্রোগ্রাম (ত্রিভুজ, বৃত্ত, সেলসিয়াস-ফারেনহাইট) এবং ছোট-বড় সংখ্যা নির্ণয়ের প্রোগ্রাম লিখার কোড জানলেই একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে। চতুর্থ অধ্যায় হতে টেবিল তৈরি, অর্ডার-আন-অর্ডার, হাইপারলিংক, ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ/কাঠামো/পাবলিশিং পদ্ধতি শিখলেই একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য বিগত সালগুলোর প্রশ্ন দেখলেই একটি আইডিয়া পাওয়া যাবে।
আমি চেষ্টা করছি সবার জন্য মোটামোটি একটি সাজেশন দেওয়ার, যাতে ছাত্রছাত্রীরা এই বিষয়টিকে ভয় না পেয়ে বরং আনন্দের সাথে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে। শিক্ষার্থীরা পড়া নয় বরং শিখার চেষ্টা কর। তবেই তোমরা শিখতে পারবে। আমাদের দেশে আইসিটি বিষয়ে পাঠদান করার মতো পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে অনেক কলেজ আছে যেখানে ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকরা আইসিটি বিষয়ে পাঠদান করে থাকেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক ইনফরমেশন পায়না এবং বরাবরের ন্যায় ফলাফল খারাপ করে। যে শিক্ষক যে বিষয়ে পারদর্শী, আমার মতে তাঁর সে বিষয়ে পাঠদান করা উচিত।
আরেকটি বিষয় নিয়ে একটু বলতে চাই যে, সকল বিষয়ে ২০০ নম্বর করে মান বণ্ঠন করা আছে। কিন্তু আইসিটি একাই ১০০। সুতরাং, এই বিষয়ে ৭৯ পেলে তার সাথে ১ যোগ করে ৮০ করার মতো ২য় পত্র নেই। তাই, আইসিটির ২য় পত্র অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করছি। আমার মতে, দেশের মানুষ যত ইংরেজি এবং আইসিটিতে পারদর্শী হবে, ততই প্রযুক্তি নির্ভর তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হবে। উদাহরণস্বরূপ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। সবশেষে বলব, “আইসিটি বিষয়টিকে সবাই আনন্দের সাথে গ্রহণ করবেন। কারণ, যে পড়ালেখার মধ্যে আনন্দ নেই সেই পড়ালেখা প্রকৃত পড়ালেখা নয়।”

লেখক ঁ প্রভাষক (আইসিটি), সরকারী সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট