চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরেপড়া রোধ উপস্থিতি বাড়াচ্ছে উপবৃত্তি

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:২১ পূর্বাহ্ণ

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরেপড়া রোধ ও স্কুলে উপস্থিতির হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০০ সালে প্রথম উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করা হয়। ওই বছরেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১২৭টি উপজেলায় প্রকল্পটি চালু হয়। ২০০২ সাল থেকে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত দেশের সকল উপজেলায় প্রকল্পটি চালু হয়ে রাষ্ট্রীয় ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে সুবিধাভোগী মা অথবা অভিভাবকের মাঝে সরাসরি কার্ডের মাধ্যমে অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মোট ৪৯কোটি ৯৪ লক্ষ ৮১হাজার ৯৮৭৫টাকা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। যেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে মোট ৪৮ কোটি ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৫০ টাকা। প্রাথমিকে ঝরেপড়া রোধ ও স্কুলে উপস্থিতির হার বৃদ্ধিতে প্রতি অর্থবছরে সরকার উপবৃত্তির হার বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ ও তাদের উপস্থিতি বাড়াতে উপবৃত্তি কার্যক্রম ভালো ভূমিকা রাখায় উপবৃত্তির টাকা বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ১০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বছরের শুরুতেই ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসামগ্রী (খাতা, কলম, স্কুল ব্যাগ) কিনতে ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে। অনিয়ম রোধ করতে পুরো টাকা দেয়া হবে শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল একাউন্টে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও উপবৃত্তি প্রকল্প সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে প্রথমবারের মত রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইলে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এর পর জুলাই ২০১৭ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি চালু করা হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং অফিসার (উপবৃত্তি) জাহেদুল ইসলাম জানান, ‘উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি থাকার আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন। একজন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য প্রতিমাসে ন্যূনতম গড়ে ৮৫ শতাংশ পাঠ দিবসে উপস্থিত থাকতে হবে। উপবৃত্তির ১০০ টাকা দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর খাতা-কলমের খরচ মেটানো সম্ভব। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর এই উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হয়।’
তিনি আরো জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে (জুলাই-জুন) চট্টগ্রাম জেলার মোট ২ হাজার ৩০০ টি স্কুলের ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৩০৮ জন শিক্ষার্থী মোট ৪৯ কোটি ৯৪ লক্ষ ৮১ হাজার ৯৮৭৫ টাকা উপবৃত্তি পেয়েছে। যেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপবৃত্তি পেয়েছে মোট ৪৮ কোটি ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৫০ টাকা। প্রথমে ২০০০ সাল থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সারা দেশের ১২৭ টি উপজেলায় এই প্রকল্প চালু হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমগ্র বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি চালু করা হয়। প্রথমে শতকরা ৪০ জন সুবিধাভোগী থাকলেও ২০১৭ সাল থেকে ১০০ ভাগ শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা ভোগ করছে।
প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও উপবৃত্তি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্প (৩য় পর্যায়) আওতায় বর্তমানে প্রাথমিকে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী মাসে ১০০ টাকা করে উপবৃত্তি পায়। ডিসেম্বরে এ উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) মেয়াদ শেষ হবে। আগামী জানুয়ারিতে শুরু হবে উপবৃত্তি প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়। সেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাবনা (ডিপিপি) উপবৃত্তির টাকা ১০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বছরের শুরুতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে জুতা কিনতে ৫০০ টাকা, স্কুল ড্রেস বাবদ ১ হাজার ও স্কুল ব্যাগ কিনতে ৫০০ টাকা মোট ২ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এতে পাঁচ বছরে উপবৃত্তি খাতে ১৫শ কোটি ও শিক্ষাসামগ্রী বাবদ ১৪শ কোটি টাকাসহ মোট ২৯শ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখানে কিছু কাটছাঁট করে তা গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয় উপবৃত্তি মাসিক ২০০ স্থলে দেড়শ টাকা ও শিক্ষাসামগ্রী বাবদ ৫০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে পাঁচ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা দরকার হবে। এভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরে উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয়) পর্যায় শেষ হচ্ছে। নতুন ডিপিপি তিন মাসের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে তা একনেকে পাস হতে হবে।
উপবৃত্তির মাসিক হার : প্রাক প্রাথমিক একক সন্তান ৫০ টাকা ও একাধিক সন্তান ১০০ টাকা। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে এক সন্তান ১০০ টাকা, দুই সন্তান ২০০ টাকা, তিন সন্তান ২৫০ টাকা ও চার সন্তান ৩০০ টাকা। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণিতে একক সন্তান ১২৫ টাকা এবং একাধিক সন্তান থাকলে ২৫০ টকা পাবে।
উপবৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্য :
শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ঝরেপড়ার হার রোধ, প্রাথমিক শিক্ষাচক্রের সমাপ্তির হার বৃদ্ধি, সার্বিকভাবে শিশুশ্রম রোধ, দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নিারপত্তা জোরদার ও প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
উপবৃত্তি কারা পাবে :
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা, মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর, হাই মাদ্রাসা সংযুক্ত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত চালুকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত অথবা নিয়ন্ত্রিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকার কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র এবতাদেয়ী মাদ্রাসা।
উপবৃত্তি প্রাপ্তির শর্তাবলী :
প্রতিমাসে নূানতম গড়ে ৮৫ শতাংশ পাঠ দিবসে উপস্থিত থাকতে হবে, শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত পরীক্ষাসমূহে অংশগ্রহণ করতে হবে।
সুবিধাভোগী নির্বাচনের পদ্ধতি :
প্রাক-প্রাথমিক এ নতুন ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স পাঁচ বছর হতে হবে, নতুন ভর্তি (২য় শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি) বার্ষিক পরীক্ষায় সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ উল্লেখপুর্বক ছাড়পত্র থাকতে হবে, বিদ্যমান শিক্ষার্থী ২য় শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণী বার্ষিক পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে ৩৩ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এবং পুনরাবৃত্তি শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবে না।

লেখক ঁ নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট