চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিরাপদ খাদ্য কী এবং কেন

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। খাদ্যকে স্বাভাবিক এবং ভেজাল ও অন্যান্য দূষণ থেকে নিরাপদ অবস্থায় বিতরণই হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য। বিশ্বব্যাপী সব সরকারই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ বেঁচে থাকার রসদই হচ্ছে খাদ্য। আর সেই খাদ্য অবশ্যই নিরাপদ হওয়া জরুরি।
দেখা যায়, রাস্তাঘাট, ফুটপাত থেকে শুরু করে স্টেশন, হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ খাবার খাচ্ছেন। উদরপূর্তি করা মুখরোচক এসব খাবারের মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থাকে। কারণ, ভোক্তারা এসব খাবার খেয়ে নানাভাবে অসুস্থ ও স্বাস্থ্য-সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ এসব খাদ্যসামগ্রীতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক উপাদান। এর পুষ্টিমান, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা এবং খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণে মানা হয় না খাদ্যনীতি। এমনকি রান্নাবান্না-ধোয়ামোছা ও পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নদীনালা-খালবিলের দূষিত পানি। উৎসস্থলেই দূষিত হচ্ছে খাদ্যপণ্য। এসবের কারণে খাদ্যে ভয়ংকর সব রোগ-জীবাণু বাসা বাঁধে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাস্তা বা ফুটপাতে যেসব খাবার তৈরি ও বিক্রি হয়, তার ৯০ শতাংশই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। নামিদামী হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবারও জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে দূষিত পানি ছাড়াও ভোজ্যতেলের বারবার ব্যবহার, রাসায়নিক থেকে রোগজীবাণু সংক্রমিত হওয়া, রাস্তার পাশে বা উন্মুক্ত স্থানে খাদ্যসামগ্রীতে ধুলাবালি, দূষিত বাতাস, গাড়ির কালো ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন হাত ও পরিধেয় বস্ত্র থেকে জীবাণু সংক্রমণ জনস্বাস্থ্যকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে বলেছেন, ‘বিষ খেয়ে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটি চাই না।’ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ খাদ্য আইনকে যুগোপযোগী করেছে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের বিকল্প নেই। কারণ, অনিরাপদ খাদ্য মানুষের শরীরে নানাভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, আমাশয়, টাইফয়েডসহ নানা ধরনের অসুস্থ হয় অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণে। এসব সংক্রামণ ছাড়াও ধীরে ধীরে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে পুষ্টি গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে। এমনকি পাকস্থলি, যকৃত ও ত্বকের ভয়াবহ স্থায়ী ক্ষতি হয়ে থাকে। ভোক্তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে দূষিত খাদ্যজনিত রোগ বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ সুস্থ-সবল জাতি গঠনে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। নিরাপদ খাবার মানুষের বেঁচে থাকা এবং সুস্থ থাকার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে বড় অর্জন আনতে গিয়ে বেড়েছে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ। আর মাটির ওপর নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু খাদ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়েছে। প্রাণ বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য উৎস স্থান থেকে পরিবহন ও গুদামজাতেও রাসায়নিক মেশানো হয়। শস্য ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাছ ও আমিষের উৎস ডিম-মুরগিও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মাছের খামারেও ব্যবহার হচ্ছে নানা বর্জ্য। পোল্ট্রি মুরগির বর্জ্য জমিতে ও মাছের খামারে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে খাদ্যের উৎস নিরাপদ থাকছে না।
অসাধু ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীদের কারসাজির কারণে খাদ্য দূষিত হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
এদিকে, ঢাকায় উন্নত দেশের মতো ভেজালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো মান নির্ধারণী স্টিকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে এই গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের মান, বিশুদ্ধতা, পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা, অবকাঠামো, খাদ্য সংরক্ষণের মান এবং রেস্তোরাঁকর্মীদের স্বাস্থ্য ও পেশাদারিত্ব বিবেচনায় নিয়ে গ্রেডিং ও স্টিকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সবুজ রঙের স্টিকারযুক্ত (এ+) ক্যাটাগরি, নীল রঙের স্টিকারযুক্ত (এ), হলুদ রঙের স্টিকারযুক্ত (বি) ক্যাটাগরি, কমলা রঙের স্টিকারযুক্ত (সি) ক্যাটাগরির মান ধরা হয়েছে। চার রঙের স্টিকার দেখে ভোজনরসিক ভোক্তারা খাবারের মান সম্পর্কে ধারণা পাবেন। কিন্তু চট্টগ্রামে এখনো গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়নি।
ভোক্তাদের দাবি, নিরাপদ খাবার পেতে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ভেজাল বা মানহীন খাদ্য সরবরাহ করে যাতে কেউ পার না পায়, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রতিটি মানুষের অধিকার। অধিকার নিশ্চিত হলে মানুষ নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাবে। সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। কেবল আইন করেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনের জন্য কৃষি, স্বাস্থ্য এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গভীর তদারকি এবং সমন্বয় প্রয়োজন। প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ। এতেই সুন্দর-ভবিষ্যত প্রজন্ম ও অগ্রগামী জাতি গঠনে সহায়ক হবে।

লেখক ঁ নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট