চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

তিন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা ওয়াসার পানি

মোহাম্মদ নুরুল আমিন

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মানবজাতিসহ অন্যান্য প্রাণীর জীবন-ধারনের জন্য সুপেয় পানি অপরিহার্য। চট্টগ্রাম নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ ও সুপেয় পানির চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে ১৯৬৩ সালের ১৬ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান অধ্যাদেশ নম্বর ১৯ এর অধীনে গঠিত হয় চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ৪০ লক্ষ জনসংখ্যার প্রতিদিনের নিরাপদ ও সুপেয় পানির চাহিদা প্রায় ৪২ কোটি লিটার। নগরবাসীর এই নিরাপদ ও সুপেয় পানির চাহিদা মিটানোর অন্যতম উৎস চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহকৃত নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই বর্ধিত চাহিদার বিপরীতে দৈনিক প্রায় ৩৬ কোটি লিটার নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। এছাড়া ১৪ দশমিক ৩ কোটি লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতার এবং ৬ কোটি লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতার আরো ২টি পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান আছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি ছাড়াও নগরবাসীর রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে অনুমোদন-প্রাপ্ত নিজস্ব গভীর নলকূপ। চট্টগ্রাম ওয়াসা মোহরা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে হালদা নদী থেকে এবং শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারে কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে তা প্রি-সেডিমেন্টেশন, কোয়াগুলেশন, ফ্লোকুলেশন, ফিল্ট্রেশন ও ডিসইনফেকশন ইত্যাদি বিভিন্ন ধাপে পরিশোধন করে নগরীতে সরবরাহ করে থাকে। পরিশোধনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে নদী থেকে উত্তোলিত পানি এবং পরিশোধনের পর পানির বিভিন্ন ধরনের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়। এসব ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ পরীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যথাক্রমে পি এইচ, টারবিডিটি, ক্লোরাইড, এলকালিনিটি, হার্ডনেস, রেসিডুয়াল ক্লোরিন, আর্সেনিক, আয়রণ, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, নাইট্রেট, ফসফেট, সালফেট, ডিও, বিওডি, সিওডি, এমোনিয়া, টোটাল কলিফর্ম, ফেকাল কলিফর্ম ইত্যাদি।
নদী থেকে উত্তোলিত ও পরিশোধনের পর পানির এসব গুণাগুণ পরীক্ষা করার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতিটি পানি শোধনাগারে একজন দক্ষ রসায়নবিদ এবং একটি আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি রয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহক্তৃ পানির গুণগত মান সুরক্ষার পাশাপাশি পানিকে জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য সরবরাহ লাইনে পাঠানোর পূর্বেই পরিশোধিত পানিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার (০.৫-১.০ পিপিএম) রেসিডুয়াল ক্লোরিন যোগ করা হয়। সরবরাহকৃত পানিতে উক্ত রেসিডুয়াল ক্লোরিনের উপস্থিতির ফলে সরবরাহ লাইনে অথবা গ্রাহকের রিজার্ভারে পৌঁছানোর পূর্ব-পর্যন্ত যদি কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও বহিরাগত দূষিত পদার্থের অনুপ্রবেশ অথবা জীবাণুঘটিত কোন আক্রমণ ঘটে তা প্রতিরোধ করতে পারে। এভাবেই চট্টগ্রাম ওয়াসা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ ও শতভাগ নিরাপদ পানি নগরীতে সরবরাহ করে আসছে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহকৃত পানির গুণগত মান ঠিক রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নগরী হতে প্রতিমাসে প্রায় ২৪০টি গ্রাহকের পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহকৃত নমুনা চট্টগ্রাম ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগারের ল্যাবরেটরিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পানির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়।
যেহেতু জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জিতব্য ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষ্যমাত্রা হলো সবার জন্য সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। যেটির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রত্যেক নগরবাসীর নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহে বদ্ধ পরিকর। নগরবাসী কাছে সরবরাহকৃত কিংবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রাপ্ত পানির ব্যাপারে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পানির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গুণাগুণসমূহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগারের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।
এছাড়াও নগরীতে আরো কয়েকটি সরকারি সংস্থা, বিশেষ করে বিসিএসআইআর গবেষণাগার-চট্টগ্রাম, চুয়েট যেখানে সাধারণ মানুষের পানির নমুনা পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। এর বাইরেও বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নগরীতে একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

লেখক ঁ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম ওয়াসা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট