চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হাসপাতালে নির্মল বায়ু রোগী ফিরবে দ্রুত বাড়ি চাপ কমবে হাসপাতালে

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

রোগীর অপারেশন সফল হয়েছে। কিন্তু পরে ইনফেকশন হয়ে গেছে। এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে। যে কারণে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, এইচডিইউ কিংবা হাসপাতালের ওয়ার্ডে নির্মল বায়ুর ব্যবস্থা না করার কারণে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একারণে রোগীরা যেমন শারীরিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, চিকিৎসকদেরও ওই ধরনের রোগীর পেছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়। তাই হাসপাতালে শুধু ঠা-া বাতাস নয়, বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে রোগীরা দ্রুত হাসপাতাল ছাড়তে পারবে। চিকিৎসকদেরও সময় বাঁচবে।
দেশের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের রোগীদের বায়ুদূষণমুক্ত রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি অস্ত্রোপচার কক্ষ ও আইসোলেশন কক্ষসমূহের মত স্পর্শকাতর কক্ষসমূহের বায়ুদূষণমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। সাধারণ মানের স্পিøট টাইপ এয়ারকুলার স্থাপন করে কাজ চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো জীবাণু ধ্বংস করার কোনো ফিল্টারেশন, বাতাসের চাপ ও বেগ রক্ষাকরণ, ভেন্টিলেশন, বাতাস পরিবর্তন ও ফ্রেশ বাতাস আনয়নের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। যার কারণে অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ বহিরঙ্গের বায়ুদূষণের চেয়ে অধিকমাত্রায় বেশি। রোগীদের মাধ্যমে বাতাসে মিশে থাকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রভৃতি জীবাণু। যা একমাত্র এইচ.ভি.এসি (হিটিং ভেন্টিলেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং) পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা বহুলাংশে সম্ভব। পুরাতন হাসপাতালসমূহে এইচ.ভি.এসির পদ্ধতি স্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঠা-া ও নিরাপদ বায়ুর জন্য ফিল্টারসহ শীতাতপযন্ত্র লাগানো হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগমুক্ত হওয়ার স্থানসমূহে রোগী যাতে আরও রোগাক্রান্ত না হয় সেজন্য হাসপাতালসমূহে বায়ুবাহিত রোগ সংক্রমণের অন্যতম দূষিত বায়ু বন্ধের জন্য উন্নত বিশ্বের ন্যায় এইচ.ভি.এসির পদ্ধতি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। রোগীরা এই দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে এইচ.ভি. এসি’র মাধ্যমে। এইচভিএসি’র মাধ্যমে বাড়ির অভ্যন্তরে আরও ভাল মানের বাতাসের সরবরাহ করে এবং আর্দ্রতা, ধোঁয়া, দুর্গন্ধ, তাপ, ধূলিকণা, বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাসের ফিল্টারেশনের পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে বায়ুদূষণের উৎসসমূহ নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। শুধু কুলিং এয়ার নয় ‘কোয়ালিটি এয়ার’ চাহিদা হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অভ্যন্তরীণ কক্ষের অর্থাৎ সাধারণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের বায়ুদূষণের পরিমাণ বহিরঙ্গের বায়ু দূষণের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ গুণ বেশি হয়ে থাকে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক লোক দৈনিক প্রায় দুই লাখ লিটার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বায়ু গ্রহণ করে থাকেন। যদিও সচেতন জনগণ খাবার-পানির জন্য অর্থ ব্যয় করেন কিন্তু পরিশুদ্ধ বাতাসের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে ঠা-া বাতাস পেয়ে থাকেন, কিন্তু পরিশুদ্ধ ঠা-া বাতাসের পরিবর্তে অধিকতর দূষিত ঠা-া বাতাস গ্রহণ করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে বায়ুবাহিত রোগ ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।

প্রায়শই শোনা যায় অপারেশন সাকসেস কিন্তু ইনফেকশনের কারণে রোগী মারা গেছেন। হাসপাতালসমূহে ইনফেকশনের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে দূষিত বা সংক্রমিত বায়ু। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ধুলাবালি, পোলেন, প্যাথোজেন প্রভৃতি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে রোগজীবাণু বাতাসে প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত প্রবাহিত হতে পারে।

দূষিত বায়ুর কারণে মানুষের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ থেকে ক্যান্সার হতে পারে, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ইটভাটা থেকে নাইট্রোজেন, অক্সাইড ও সালফার-ডাই অক্সাইড এজমা, হাঁপানি, এলার্জি সমস্যা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।
বালুকণার মাধ্যমে ফুসফুসের স্পিকোসিস নামে রোগ সৃষ্টি হয়। যা ফুসফুসকে শক্ত করে দেয়। কার্বন-মনো-অক্সাইড রক্তের সঙ্গে মিশে অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। হৃৎরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সর্বোপরি বহু মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে পড়ে এই বায়ুদূষণ। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বড় শহরগুলো মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান প্রথম। বিশ্বে প্রতিবছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে বায়ু দূষণের কারণে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী ও জনসচেতনতা না বাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে বাংলাদেশ।
অপরদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশে^ প্রতি ছয়জনের একজনের মৃত্যু ঘটছে পরিবেশ দূষণের কারণে। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়। এসব দেশে পরিবেশ দূষণই কেড়ে নিয়েছে এক-চতুর্থাংশ মানুষের প্রাণ। গবেষণা প্রতিবেদন মতে, দূষণগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণই সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে।
অপরদিকে বিশ^ব্যাংকের একটি তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে।

চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, এখানে হাসপাতালসমূহে এসি লাগানো হলেও তাতে জীবাণূ ফিল্টারেশনের ব্যবস্থা নেই। বিশে^র অনেক উন্নত দেশ জীবাণূ ফিল্টারেশনের ব্যবস্থা করে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা আছে উল্লেখ করে বলেন, তবে যেসব কাজ অতীব জরুরি সেগুলি আগে করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে হাসপাতালে বিশুদ্ধ বায়ুর ব্যবস্থাও হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট